ইরানের রক্ষণশীলরা কেন ইসরাইল-হিজবুল্লাহ অস্ত্রবিরতির বিপক্ষে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে ইরানের বিরুদ্ধে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে তেহরানে সম্ভাব্য সামরিক হুমকির আশঙ্কা বাড়ছে।
এ নিয়ে ইরানের কিছু রক্ষণশীল নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, উত্তর ইসরাইলে লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা কমানো ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
ইরানি সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন রক্ষণশীল বিশ্লেষক মিডল ইস্ট আই (এমইই)-কে বলেছেন, যখন ইসরাইলি সরকার ইরানকে লেবাননের অস্ত্রবিরতির মূল লক্ষ্য বলে ঘোষণা করে, তখন এটি স্পষ্ট যে, আমাদের ইসরাইলের মুখোমুখি হতেই হবে, তা আমরা চাই বা না চাই।
ইসরাইল এখন লেবানন সীমান্ত থেকে মনোযোগ সরিয়ে গাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারে।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর হিজবুল্লাহ এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা একটা কৌশলগত জোট গড়ে হামাসকে সমর্থন জানায়। কিন্তু লেবাননে ব্যাপক যুদ্ধের কারণে গাজার সঙ্গে হিজবুল্লাহ ফ্রন্টের সংযোগ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বোমা হামলায় ৩,৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরাইলের সুযোগ এবং ইরানের উদ্বেগ
ইরানের রক্ষণশীল পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অস্ত্রবিরতি চুক্তি ইসরাইলকে একটি সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। যা তাকে অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও আগ্রাসীভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। যা আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
যদিও ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার হোসেইন সালামি হিজবুল্লাহর নেতৃত্বকে একটি চিঠিতে বলেছেন, লেবাননে অস্ত্রবিরতি ইসরাইলি শাসনের জন্য কৌশলগত এবং লজ্জাজনক পরাজয়। এটি গাজার যুদ্ধ শেষের সূচনা হতে পারে।
মিডিয়া প্রতিক্রিয়া
ইরানি মিডিয়ার বেশিরভাগই এই অস্ত্রবিরতিকে হিজবুল্লাহর কৃতিত্ব হিসেবে চিত্রিত করেছে।
ইরানের রক্ষণশীল সংবাদপত্র কেহান ইসরাইলের দক্ষিণ লেবাননে অগ্রসর হতে ব্যর্থতা এবং হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের ক্ষমতাকে ইসরাইলের পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তবে রিফর্মিস্ট দৈনিক ইতমাদ সতর্ক করে বলেছে যে, লেবাননের ফ্রন্টে লড়াই শেষ হওয়া ইসরাইলের ওপর চাপ কমিয়ে গাজায় তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করার সুযোগ দেবে।
যদিও কিছু বিশ্লেষক লেবাননে অস্ত্রবিরতিকে হিজবুল্লাহর বিজয় হিসেবে দেখছেন। কারণ এটি হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে পুরোপুরি অস্বীকার করেনি।
রক্ষণশীল সাংবাদিক সাদেক নিকু বলেছেন, যখন লেবাননের মানুষ হিজবুল্লাহর পতাকা নিয়ে বিজয় উদযাপন করে, তখন আমরা কীভাবে এই চুক্তিকে পরাজয় হিসেবে দেখবো?
তাই দেখা যাচ্ছে যে, লেবাননের অস্ত্রবিরতি চুক্তি ইরানের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারণ এর মাধ্যমে ইসরাইল সরকার নতুন কৌশল তৈরি করতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই