Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

লেবাননে অস্ত্রবিরতিতে লাভবান কারা?

নাজমুশ শাহাদাৎ

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম

লেবাননে অস্ত্রবিরতিতে লাভবান কারা?

লেবাননে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতি চুক্তি বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। যাকে স্বাগত জানিয়েছে পক্ষ-বিপক্ষ সবাই। এখন এই চুক্তি থেকে কোন পক্ষ বা কারা বেশি সুবিধা পাচ্ছে- তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অস্ত্রবিরতি চুক্তি ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী বা হিজবুল্লাহর মধ্যে কার জন্য বেশি উপকারী, তা এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ইসরাইলি দৃষ্টিকোণ থেকে

ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই এই অস্ত্রবিরতিকে তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে। তাদের লক্ষ্য ছিল- হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামো এবং তাদের লড়াইয়ের শক্তিকে দুর্বল করা। পাশাপাশি দক্ষিণ লেবাননে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করা।

যা অর্জন করতে পারেনি ইসরাইল। তাই এই অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে ইসরাইলের জন্য একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

হিজবুল্লাহর দৃষ্টিকোণ থেকে

৬০ দিনের এই অস্ত্রবিরতি হিজবুল্লাহর জন্য কৌশলগত দিক থেকে বেশি উপকারী হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যেমন- 

অস্ত্র সংগ্রহ ও পুনর্গঠন:

ইসরাইলের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ কখনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ মার্কিন অস্ত্রাগার থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কয়েক দিন পরপরই সরবরাহ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহ নতুন অস্ত্র সংগ্রহ এবং ব্যবহারে কঠোর বাধার সম্মুখীন হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি এই অস্ত্রবিরতি হিজবুল্লাহকে পুনর্গঠন এবং পুনর্সজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেয়, তবে তারা বৃহৎ উপকার লাভ করবে।

এই অস্ত্রবিরতি যদি তাদের পুনর্গঠন ও পুনরায় সজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেয়, তাহলে এটি তাদের শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ইসরাইলি বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব ও হিজবুল্লাহর প্রস্তুতি

ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীকে চুক্তি মানার বিষয়ে কখনোই বিশ্বাসযোগ্য মনে করা হয়নি। ২০০৬ সালে হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সংখ্যা ৩০,০০০-এরও বেশি।

তাই হিজবুল্লাহও তাদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সচেতন এবং অস্ত্রবিরতি থাকা সত্ত্বেও সর্বদা সতর্ক থাকবে। ইসরাইলের প্রতিশ্রুতির ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই এবং তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য প্রস্তুত।

গাজায়ও অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনা

লেবাননে অস্ত্রবিরতির ফলে একটি সম্ভাবনা তৈরি হলো যে- নির্দিষ্ট শর্তে এই সাময়িক অস্ত্রবিরতি দক্ষিণ লেবানন থেকে গাজার দিকেও সম্প্রসারিত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ অক্ষ (Resistance Axis) অস্ত্রবিরতির সুবিধা ব্যবহার করে একটি বৃহত্তর সামরিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে পারে।

মানসিক ও কৌশলগত সংঘাত

এই অস্ত্রবিরতির সুবিধা নিয়ে হিজবুল্লাহ নিজেদের দ্রুত এবং দৃঢ়ভাবে পুনর্গঠন শুরু করবে। অন্যদিকে ইসরাইল আরও গভীর মানসিক এবং কৌশলগত সংকটে প্রবেশ করছে।

অভ্যন্তরীণ চাপ এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ

এদিকে অস্ত্রবিরতির ঘোষণার পরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। ইসরাইলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিত্ব তাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

অন্যদিকে নেতানিয়াহুর নীতির কারণে অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যেও হতাশা এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। একাধিক জনমত জরিপে দেখা গেছে যে, অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দারা নেতানিয়াহুর নীতিতে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।

পরিশেষে, এই অস্ত্রবিরতি হিজবুল্লাহকে তাদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের একটি বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইল অভ্যন্তরীণ চাপ এবং কৌশলগত সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ এই সময়টাকে তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করবে। অন্যদিকে ইসরাইলি নেতৃত্ব তাদের সামরিক এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতার জন্য জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মুখে পড়বে।

এসব পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, লেবাননের এই অস্ত্রবিরতি কৌশলগতভাবে হিজবুল্লাহর জন্য বেশি উপকারী হতে পারে। যা ভবিষ্যতের সংঘাতে তাদের আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। 

সূত্র: ইরনার বিশ্লেষণ অবলম্বনে।

ঘটনাপ্রবাহ: লেবানন ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম