আফগানিস্তানে হত্যার দায়ে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
সংগৃহীত
হত্যার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। পাখতিয়া প্রদেশের গার্দেজে স্টেডিয়ামে ভোর বেলায় এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে যা সুপ্রিম কোর্টের সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হয়।
ইসলামে শাস্তিমূলক বিচার বা কিসাস’এর বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযুক্ত হত্যাকারীর প্রাণদণ্ডের বিষয়য়ে প্রকাশ্যে কার্যকর করার কথা জানায় তালেবান কর্তৃপক্ষ। যে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রাদেশিক সরকার বলেছে অন্যান্যদের মধ্যে তালেবানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানিসহ জনসাধারণ, বয়স্ক বেসামরিক লোকজন, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্মকর্তারা এই প্রাণদণ্ডের বিষয়টি দেখেন। তবে কর্তৃপক্ষ আগত লোকজনদের ক্যামেরা কিংবা মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে দেননি।
মৃত্যুদণ্ডের শিকার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আয়াজ আসাদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তালেবান নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে।
এই প্রাণদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে তালেবানের শীর্ষ আদালত নির্দিষ্টভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন বন্দুকের গুলি ব্যবহার করে এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায় জনসাধারণ ঘটনাটি দেখতে স্পোর্টস স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে তালেবান সরকার জানিয়েছে, ‘এই মামলাটি নিবিড়ভাবে তিন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ইসলামিক আমিরাতের সামরিক আদালত দ্বারা এবং তারপর এই প্রতিশোধমূলক বিচার বা কিসাসের আদেশ জারি করা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আফগানিস্তানে এটি ছিল হত্যায় অভিযুক্ত ষষ্ঠ ব্যক্তির প্রাণদণ্ড। তারা এখন অপরাধমূলক বিচারের ব্যবস্থাটি করছে ইসলামিক আইন শারিয়ার মাধ্যমে। আগে বন্দুকের গুলির মাধ্যমে প্রাণদণ্ড দেওয়া হতো।
জাতিসংঘ এ ধরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটি জীবনের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি এবং নৃশংস অমানবিক এবং অবমাননামূলক আচরণ বা শাস্তি। যদিও এ সত্ত্বেও আফগান নেতারা এই রকমের প্রাণদণ্ড দিয়ে আসছেন।
আফগান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপটিয়ার রিচার্ড সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স—এ বুধবার বলেন, ‘আফগানিস্তানের গার্দেজ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে আজকের ভয়াবহ প্রকাশ্য হত্যা এবং তালেবানের অন্যান্য শাস্তি ও হত্যাকাণ্ডের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহযোগিতা মিশন এই প্রাণদণ্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জানায়, ‘কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের দায়িত্বের বিপরীত এবং তা বন্ধ করতে হবে।’
এর আগে, আফগানিস্তানের জনাকীর্ণ স্টেডিয়ামগুলিতে যৌনতা, সমকামিতা, চুরি ও ডাকাতির মতো ‘অনৈতিক অপরাধের’ জন্য শত শত নারীকে তালেবান প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করেছে। তালেবান সুপ্রিম কোর্টের উপাত্ত অনুযায়ী কেবল অক্টোবর মাসেই, নারীসহ প্রায় ১০০ জন আফগানকে দর্শকদের সামনে বেত্রাঘাত করা হয় এবং তারা ছয় মাস থেকে দু বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।