রিয়াদে ওআইসি ও আরব লীগের বিশেষ সম্মেলন
ইসরাইলের ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা এরদোগানের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পিএম
ফিলিস্তিনিদের নিয়ে দখলদার ইসরাইলের ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি বলেন, ইসরাইলের লক্ষ্য হলো ‘ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্তভাবে বিলুপ্ত করা এবং ফিলিস্তিনের সব অঞ্চল দখল করা’।
এ বিষয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সৌদি আরবের রিয়াদে ওআইসি ও আরব লীগের এক বিশেষ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
এরদোগান বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ধারাবাহিক আক্রমণ ও পশ্চিম তীরে দমন-পীড়ন প্রমাণ করে যে, পরিস্থিতি কোনদিকে এগোচ্ছে’।
মূলত মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন।
এরদোগান জানান, তুরস্ক গাজাসহ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চালানো ইসরাইলের আক্রমণাত্মক কার্যকলাপকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে। এ বিষয়ে তার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলায় অংশগ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তুরস্কের সমর্থন
সম্মেলনে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধানে ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে তুরস্কের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এরদোগান।
তিনি জানান, ইসরাইলি পার্লামেন্ট (নেসেট) ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা UNRWA-কে নিষিদ্ধ করেছে। যার মাধ্যমে তারা দুই রাষ্ট্র সমাধান বাতিল করতে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে ফেরার পথে বাধা সৃষ্টি করতে চায়।
এরদোগান বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু পশ্চিমা দেশ ইসরাইলকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে এই যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় মুসলিম দেশগুলোকেই ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে’।
ইসরাইলকে একঘরে করার আহ্বান
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইলকে একঘরে করার জন্য চাপ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যতক্ষণ না তাদের আগ্রাসন শেষ হয়।
এ সময় তিনি জানান, তুরস্ক গত এপ্রিলে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করেছে এবং তিনি আশা করেন যে, অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোও একই পদক্ষেপ নেবে।
এরদোগান বলেন, ‘তুরস্ক এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত যা দেখাবে যে, ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড অব্যাহতভাবে দখলে রাখার কারণে তাকে একটি চরম মূল্য দিতে হচ্ছে’।
একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের দেশগুলোকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান এবং আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘একদিন ফিলিস্তিনও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ করবে’।
গাজা ও অন্যান্য অঞ্চলে চলমান আক্রমণ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল যে হামলা শুরু করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত ৪৩,৬০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় ১,০২,৯২৯ জন।
ইসরাইলি হামলার কারণে গাজার প্রায় সম্পূর্ণ জনসংখ্যা তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলের অবরোধের ফলে পুরো গাজায় খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতার নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ থামানোর জন্য কোনোরকম আপস করতে বা ছাড় দিতে অস্বীকার করেছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে রিয়াদে অনুষ্ঠিত ওআইসি-আরব লীগের এই সম্মেলনটি গত বছরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। সেই সঙ্গে গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননে ইসরাইলের হামলা বন্ধে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। সূত্র: ডেইলি সাবাহ