ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াল কাতার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে আপাতত সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার।
তবে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইল ও হামাস ‘আন্তরিকতা দেখালে; তারা আবারও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ফিরতে রাজি আছে।
এছাড়া দোহা থেকে হামাসের কার্যালয় তুলে দেওয়ার বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে কাতার।
শনিবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে ‘দুই পক্ষ গুরুত্ব ও ইচ্ছা প্রকাশ’ না করার আগ পর্যন্ত আর মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব নেবে না দেশটি।এই বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১০ দিন আগেই দুই পক্ষকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কাতার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, দুই সপ্তাহ আগে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এক যুগ আগে ২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের অনুরোধে রাজধানী দোহাতে হামাসকে রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল কাতার।
শনিবার বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে দোহায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে কাতার।
এমন একটি সময় কাতার এই ঘোষণা দিলো যখন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধ অবসানের নতুন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ তুলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কাতারে হামাসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি আর মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
তবে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে অবশ্য জানানো হয়েছে, দোহায় হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধের খবরটি ‘সঠিক নয়’।
হামাসের পক্ষ থেকেও একই কথা জানানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ কাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ। সেখানে একটি বড় মার্কিন বিমান ঘাঁটিও রয়েছে।
ইরান, তালেবান, রাশিয়াসহ বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনেক সূক্ষ্ম ইস্যুতে আলোচনা এবং সংলাপের ক্ষেত্রেও কাতারকে ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বছরব্যাপী যে যুদ্ধ চলছে, সেটি থামানোর লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি কাতারও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছিল।
যদিও দীর্ঘ আলোচনার পরও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইল ও হামাস এখনও একমত হতে পারেনি।
এদিকে, আলোচনা সফল না হলেও কাতারের সঙ্গে হামাসের সম্পর্কের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত জুলাই মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর দোহায় তিন দিনের শোকসভা করেছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
কিন্তু সম্প্রতি হামাসের আরেক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, দোহায় একটি ছোট হলে কেবল দুই ঘন্টার জন্য শোকসভা করতে পেরেছে তারা।
গত বছরের শেষদিকে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পক্ষ দু’টির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার।
সবশেষ গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় এই বিষয়ে ইসরাইল ও হামাসকে আলোচনার টেবিলে বসায় কাতার। কিন্তু সেখানে হামাস স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
ফলে কাতারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা যেন পুরোপুরি ভেস্তে না যায়, সেজন্য দোহায় হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়টি থাকছে বলে জানিয়েছে দেশটি।