ট্রাম্পের জয়ে উচ্ছ্বসিত ইসরাইল, অনিশ্চিত গাজার ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ পিএম
ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই সামাজিক মাধ্যম এক্সে ‘Yesssss’ লিখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ইসরাইলের কট্টরপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির। সেই সঙ্গে তিনি ইসরাইল ও মার্কিন পতাকার ইমোজিও যোগ করেন।
আর নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, এটি ‘ইসরাইল ও আমেরিকার বন্ধুত্বের জন্য একটি শক্তিশালী অঙ্গীকার’।
ইসরাইলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা
ইসরাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৬৫ শতাংশ ইসরাইলি ট্রাম্পকে কমলা হ্যারিসের চেয়ে বেশি পছন্দ করেছেন। আর ইসরাইলি ইহুদিদের মধ্যে এই হার আরও বেশি; প্রায় ৭২ শতাংশ ইহুদিই বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে ইসরাইলের স্বার্থ আরও ভালোভাবে পূরণ হবে।
ইসরাইলের ক্ষেত্রে এটি নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালের নির্বাচনের আগেও ইসরাইলে ট্রাম্পের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। তখন প্রায় ৬৩ শতাংশ ইসরাইলি তাকে সমর্থন করেছিলেন। এই সমর্থনের একটি বড় কারণ হলো- সেই সময় ইসরাইলের প্রতি ট্রাম্পের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সেখানে মার্কিন দূতাবাসও স্থানান্তরিত করেন।
এছাড়াও তিনি গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের চারটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তি বাস্তবায়ন করেন।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভবিষ্যৎ
এদিকে ট্রাম্পের বিজয়ে ইসরাইলের অনেকেই বিশ্বাস করছেন যে, মার্কিন এই নেতা ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি বড় বাধা হতে পারেন।
কারণ হলো- ট্রাম্প ২০২০ সালে তার মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, যা অনেকের কাছে ইসরাইলের প্রস্তাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল। এতে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি নির্মাণকে স্বীকৃতি দেওয়া, জেরুজালেমকে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার অস্বীকার করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসায় এই পরিকল্পনাগুলো পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে চিরতরে অনিশ্চিত করে দিতে পারে।
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের সম্পর্ক
নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্কও এই অবস্থাকে প্রভাবিত করছে। নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার মাধ্যমে ইসরাইলের ওপর যেকোনো বিধিনিষেধ শিথিল করা সম্ভব হবে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহু হয়তো ট্রাম্পকে যতটা সহজে প্রভাবিত করতে পারবেন বলে ভাবছেন, তা নাও হতে পারে। ট্রাম্প সাধারণত গাজা যুদ্ধে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহী নন। যদিও তিনি হয়তো ইসরাইলের সামরিক সাহায্যের ক্ষেত্রে উদার হতে পারেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সমর্থনে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিজের কৌশলগত পরিকল্পনায় আরও জোর দিতে পারবেন।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মনে করছে যে, এতে ইসরাইলের কট্টরপন্থি পদক্ষেপের ওপর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আরও বাড়তে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক সম্পর্ক, যা দুই দেশের মধ্যে গভীর মৈত্রীতে রূপ নিয়েছে, ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা এই সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারে।
তবে এতে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সূত্র: আল-জাজিরা