Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ও হ্যারিসের হার যেসব কারণে

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১০ পিএম

ট্রাম্পের নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ও হ্যারিসের হার যেসব কারণে

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার চার বছর পর আবারও সেই কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরছেন ট্রাম্প। কোটি কোটি আমেরিকান ভোট দিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে নিশ্চিতভাবে এটিই সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন।

ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রচারণার পর্বকে ইতিহাসের অংশ বললে কম বলা হবে না। প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে দুই দফা হত্যা চেষ্টা হয়। এছাড়াতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নিজেকে সরিয়ে নেন।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেসব অঙ্গরাজ্যে হয়েছে, সেসব অঙ্গরাজ্যে আমেরিকানরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পেছনে অর্থনীতি ও অভিবাসনের মত ইস্যুগুলোকে সামনে রাখছেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হারলেও নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনে হারার পরও প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকার জন্য সেবার তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেসব কার্যক্রমের সমালোচনা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের সহিংস হামলার দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান। পাশাপাশি ব্যবসায়িক নথি জাল করার দায়ে গত বছর অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। যাকে কিনা আদালত অপরাধী হিসেবে রায় দিয়েছে।

কাজেই ট্রাম্পকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হওয়ার বিষয়টি খুব একটা অবাক হওয়ার মত বিষয় নয়।

প্রচারণার পুরোটা সময় ট্রাম্প বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেয় করে কৌতুক করেছেন ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য যেভাবে সাড়া ফেলেছে

নির্বাচনি প্রচারণার সময় অধিকাংশ আমেরিকানই বলেছেন যে, তারা সুযোগ পেলে ট্রাম্পের ‘দুর্গন্ধযুক্ত কথাবার্তা’ বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী।

কারণ হিসেবে তারা ট্রাম্পের একটি প্রশ্নের ওপর জোর দিচ্ছেন, যেটি তিনি সব র‍্যালিতে করেছেন। সেটি হলো- ‘আপনারা কি দুই বছর আগের তুলনায় এখন ভালো আছেন?

ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া বহু মানুষ বলেছেন, তারা মনে করেন, ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তারা বর্তমানের চেয়ে ভালো ছিলেন।

অর্থনৈতিক মন্দা বা মূল্যস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক সংকটের জন্য বাইডেন প্রশাসন দায়ী বলে মনে করেন ভোটারদের একটা বড় অংশ।

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে রেকর্ড মাত্রার অবৈধ অভিবাসন নিয়েও ভোটারদের একটা বড় অংশকে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করতে দেখা যায়। ট্রাম্প বা তার সমর্থকদের মতো এই ভোটারদের অনেকেই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পক্ষপাতী।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার নীতি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’

এবারের নির্বচানি প্রচারণায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

পুরো আমেরিকাজুড়ে ডানপন্থি ও বামপন্থি- সবার মধ্যেই হতাশা দেখা গেছে একটি বিষয়কে ঘিরে। তা হলো- তারা মনে করেন, ইউক্রেনে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে, তা যদি আমেরিকার ভেতরে খরচ করা হতো, তাহলে তা আমেরিকার অর্থনীতিকে অনেক শক্তিশালী করতে পারতো।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকেই কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতে পারেননি। যিনি চার বছর ধরে জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা মনে করেছেন, কমলা হ্যারিসকে ভোট দিলে ইউক্রেন বিষয়ক নীতি অনেকটা একইরকম থাকতো।

তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন নীতির কতটা পরিবর্তন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে।

২০১৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন রাজনৈতিকভাবে অনেকটা বহিরাগতই ছিলেন। সে সময় শুরুতে একটা সময় পর্যন্ত তিনি অভিজ্ঞ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ নিয়েছেন। তবে এই দফায় তিনি খুব একটা নিয়মমাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান বলে মনে হয় না।

ওই উপদেষ্টাদের অনেকেই পরবর্তীতে ট্রাম্পকে ‘মিথ্যাবাদী’, ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘অনুপযুক্ত’ বলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাদের মতে, এ দফায় ট্রাম্প যদি তার অনুগতদের পাশে রেখে শাসনকাজ পরিচালনা করেন, তাহলে খুব শীঘ্রই তিনি তার চরমপন্থি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবেন।

এবারের নির্বাচনে ভোটারদের সামনে আমেরিকার দুটি দিক তুলে ধরা হয়েছিল। তা হলো-

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের বলেছিলেন, তাদের দেশ ক্রমাগত ধ্বংসের পথে যাচ্ছে এবং শুধু তিনি দেশকে ‘আবারও মহান দেশে পরিণত’ করতে পারবেন।

অন্যদিকে কমলা হ্যারিস সতর্ক করেছিলেন যে, যদি ট্রাম্প নির্বাচিত হন তাহলে আমেরিকার গণতন্ত্রই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।

ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘তারা তাদের ক্ষেত্রের শীর্ষে রয়েছেন, আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক’।

তিনি গণমাধ্যমে তার সমালোচনা বন্ধ করার বিষয়েও কথা বলেছেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি এমন মন্তব্যও করেছেন যে, গণমাধ্যমের কর্মীরা মারা গেলেও তিনি খুব একটা ব্যথিত হবেন না।

তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখন মানুষ হয়তো বাস্তবিক জানতে পারবে যে, এতদিন প্রচারণার সময় তিনি যা যা বলেছেন, তার কতটুকু বলার জন্য বলা আর কতটুকু আসলেই তিনি বাস্তবায়ন করতে চান।

প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। এবার দ্বিতীয় দফায় তার প্রস্তাবিত অনেক পরিকল্পনাই হয়তো বাস্তবে রূপ দিতে চাইবেন তিনি।

আর মনে রাখতে হবে, শুধু যে আমেরিকানরাই ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফায় মোকাবিলা করতে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বাকি বিশ্বও দেখতে পাবে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলতে তিনি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিতে ২০% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব, ইউক্রেন আর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিসহ ট্রাম্পের দাবি করা বিভিন্ন নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেগুলোও এখন দেখার বিষয়। সূত্র: বিবিসি

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম