হ্যারিস নাকি ট্রাম্প- বিশ্বনেতাদের কার কি অবস্থান?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন নেতারা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ বিবেচনা করছেন। নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েও ভাবছেন।
যদিও বেশিরভাগ নেতা কোনোধরনের সরাসরি সমর্থন জানান দিচ্ছেন না। তবুও তাদের বিভিন্ন মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তারা কার প্রতি ঝুঁকছেন।
নিচে বিশ্বের কিছু প্রধান নেতার অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ভ্লাদিমির পুতিন (রাশিয়া)
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত ট্রাম্পের জয়কে সমর্থন করবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প রাশিয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে নরম মনোভাবাপন্ন। যার ফলে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা- দুটোই কমতে পারে।
এছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে পুতিনকে তুলনামূলক সহজ মনে করা হয়, যা কামালা হ্যারিসের ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে।
শি জিনপিং (চীন)
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেননি। তবে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, হ্যারিসের বিজয় তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে যুক্তরাস্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং আমেরিকা চীনের ওপর বিভিন্ন শুল্ক আরোপ করেছিল। কমলা হ্যারিস প্রশাসন সম্ভবত এই শুল্ক নীতিকে আরও কঠোরভাবে অনুসরণ করবে না।
তবে অতীতে চীনের বিষয়ে যুক্তরাস্ট্রের দুটি দলই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে চীন স্বভাবতই উভয় প্রার্থীর ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ইসরাইল)
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্ভবত ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকে আছেন। কারণ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইসরাইলের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। এমনকি ইসরাইলের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন।
তবে বাইডেন প্রশাসনও চলমান গাজা সংকটের মধ্যে ইসরাইলের প্রতি যথেস্ট পরিমাণে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এসেছে। তাই কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলেও তিনি এই নীতি চালিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপ এবং ন্যাটো নেতারা
ইউরোপের বেশিরভাগ নেতা বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ন্যাটো নিয়ে তার সন্দেহজনক মনোভাব এবং পলিসির অস্থিরতা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন করেছিল।
এক্ষেত্রে হ্যারিস বাইডেনের মতই স্থায়ী সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবেশ এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুতেও হ্যারিস প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের আরও ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি (ভারত)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলছেন। কারণ ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলেরই সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী। তবে ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মনোভাব ভারতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। যদিও কমলা হ্যারিসের প্রশাসন ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেননা বাইডেনের সময়ে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা হ্যারিস প্রশাসনে আরও প্রসারিত হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান
দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া ও চীনের মতো হুমকির বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে হ্যারিসের বিজয় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন নীতি অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি অবশ্য এই অঞ্চলে কিছুটা অস্থির ছিল। তাই হ্যারিস প্রশাসনের সম্ভাব্য ধারাবাহিক নীতিই এশিয়ার দেশ দুটির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্সিই সম্ভবত যুক্তিযুক্ত। কারণ ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হলে তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে পুনরায় সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার চেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে।
এছাড়া চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কেনানা চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
পরিশেষে বলা হয়, বিশ্বের অনেক নেতাই এই মুহূর্তে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করতে পারেন। কারণ তিনি একটি স্থায়ী এবং পূর্বনির্ধারিত নীতি পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে পুতিন এবং নেতানিয়াহুর মতো নেতারা সম্ভবত ট্রাম্পের নীতির প্রতি ঝুঁকে আছেন। কারণ ট্রাম্প তাদের কিছু নির্দিষ্ট স্বার্থে আরও নমনীয় হতে পারেন।
মূলত ৫ নভেম্বরের এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই বিশ্বব্যাপী অনেক বিষয়ের গতিপথ নির্ধারিত হবে। তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা