১৯৭৯ সালের জিম্মি সংকট পূর্তি: যুক্তরাষ্ট্রের পতনের হুমকি ইরানের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তারা মুসলমানদের জবাই ও হত্যা করে টিকে থাকতে পারে না’।
তেহরানের সমাবেশে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় তাদের সতর্ক করে দিই যে তারা যদি তাদের আচরণ পরিবর্তন না করে, তাহলে তারা পতন ও ধ্বংসের দিকে যাবে।’
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর মার্কিন জিম্মি সংকটের বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ করেছে ইরান। তেহরানে সাবেক মার্কিন দূতাবাসের বাইরে এতে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। এ সমাবেশের বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
সমাবেশ থেকে ইরানিরা ‘ইসরাইলের মৃত্যু, আমেরিকার মৃত্যু’ বলে স্লোগান তুলে। বর্তমানে বন্ধ হয়ে থাকা মার্কিন দূতাবাসটি ‘ডেন অফ স্পাইজ’ নামে পরিচিত একটি জাদুঘর এবং আমেরিকা বিরোধী ম্যুরাল দ্বারা আবৃত।
মার্কিন-ইরান জিম্মি সংকট কী?
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর পশ্চিমাপন্থী প্রধানমন্ত্রী রেজা শাহ পাহলভির পতন হয়। এরপর সুসম্পর্কের সুযোগে চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয় ইরানের সাধারণ মানুষ।
ওই বছরের ৪ নভেম্বর একদল ইরানি ছাত্র ঝড়ো বেগে তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে পড়েন। ৬০ জনের বেশি মার্কিন কর্মীকে এ সময় জিম্মি করে ফেলা হয়। এ ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত শাহকে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হয়।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার অনেক চেষ্টা করেও তেহরানের ওই ঘটনার কোনো সমাধান করতে পারেননি। এমনকি ‘অপারেশন ইগল ক্ল’ নামের একটি ঝুঁকিপূর্ণ সামরিক অভিযানও ঘটনাক্রমে ব্যর্থ হয়। ইরানি ছাত্ররা কিছু মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত ৫২ জন জিম্মি হিসেবে থেকে যায়।
এ ঘটনায় মার্কিন নাগরিকেরাও কার্টারের ওপর আস্থা হারায়। পরবর্তী নির্বাচনে সদর্পে ক্ষমতায় আসেন রিপাবলিকান প্রার্থী রোনাল্ড রিগ্যান। ১ ৯৮০ সালের নির্বাচনে রিগ্যান ক্ষমতায় আসার পর তেহরানের মার্কিনবিরোধী মনোভাবের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
১৯৮১ সালের ২১ জানুয়ারি রিগ্যান উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নির্দেশে ছাত্ররা ছেড়ে দেন জিম্মি করা মার্কিন নাগরিকদের। তত দিনে পার হয়ে গেছে ৪৪৪ দিন। ইতিহাসে এটি মার্কিন নেতৃত্বের বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয়।
ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত শাহকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার কারণেই যে শুধু তেহরানে মার্কিন নাগরিকদের জিম্মি করা হয়, তা নয়। মার্কিনদের ওপর ইরানিদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে ওই ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কের টানাপোড়েন মূলত তখন থেকেই দৃশ্যমান।
১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ইরান জিম্মি সংকটের এই দিনটি আনন্দ আর উৎসব নিয়ে উদযাপন করে থাকে।