অন্ত্রের ছত্রাক নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ চলছে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম
অন্ত্রের ছত্রাক নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ চলছে। কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টোমাস বশ ও তার টিম অন্ত্রে ছত্রাকের গুরুত্ব জানতে চায়৷ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ছত্রাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়েও তারা গবেষণা করছেন৷
টোমাস বলেছেন— অনেক প্রশ্নের এখনো কোনো সদুত্তর নেই৷ ছত্রাকের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার কীভাবে কথোপকথন চলে, সেগুলো আমাদের ‘হোস্ট সেল'-এর সঙ্গেই বা কীভাবে আদানপ্রদান করে, ফাংগাস কীভাবে আচমকা রোগের প্যাথোজেন হয়ে ওঠে, অন্ত্রের অন্যান্য বাসিন্দা অন্য কোনো বিন্যাসে থাকলে বা ব্যাঘাতের মুখে পড়লেই কি এমনটি ঘটে? বর্তমানে আমরা সেসব জানি না৷ গবেষণার মাধ্যমে সেই জ্ঞানার্জনের চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা প্রদাহের কারণে দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের রোগ সম্পর্কে জানতে চান, যেগুলোকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ' বলা হয়৷ প্রশ্ন হলো— অন্ত্রের ছত্রাক সে ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করে? ছত্রাকের এক অথবা একাধিক কোষ থাকতে পারে৷ যে কোনো মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে৷ যেমন মুখ, যৌনাঙ্গ বা অন্ত্র৷ ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স নামের ইস্ট ফাংগাস সবচেয়ে ঘন ঘন দেখা যায়৷
ডাক্তার হিসেবে আন্দ্রেয়াস মিশালসেন অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখেন না৷ তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের অন্ত্রেই নির্দিষ্ট মাত্রায় ছত্রাক রয়েছে৷ তাতে সাধারণত কোনো ক্ষতি হয় না৷ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেটি কোনো প্যাথোলজিক্যাল ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয় না৷ কম পরিমাণে থাকলে কোনো সমস্যা নেই৷ তবে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি হলে সামগ্রিক মাইক্রোবায়োম পরীক্ষা করতে হবে৷
মাইক্রোবায়োম– অর্থাৎ গোটা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট, ত্বক ও মিউকাস ঝিল্লির ১০০ ট্রিলিয়ান অণুজীব৷ সব বাসিন্দার মধ্যে স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷ কয়েক বছর ধরে বিষয়টি গবেষণার মূল লক্ষ্য হয়ে উঠছে৷ সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক শনাক্ত করা ও রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আরও ঘনঘন সাফল্যও দেখা যাচ্ছে৷
আন্দ্রেয়াস মিশালসেন বলেন, এসব ছত্রাক মেটাবলিক উপাদান সৃষ্টি করে, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে এমনকি মেটাবলিজমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে৷ শেষে শরীরে সমস্যা দেখা দেয়৷
ছত্রাকের কারণে পেট্রা ব্যোডেফেল্ডের অন্ত্রের ভারসাম্যে এমন বিঘ্নের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ প্রায় দুই বছর ধরে তিনি পেটের ব্যথা ও চাপের কারণে একটানা কষ্ট পেয়েছেন৷ বিশেষ করে খাদ্যগ্রহণের মাঝের সময়ে কষ্ট বেড়ে যেত৷ অন্ত্রের রোগী হিসেবে পেট্রা ব্যোডেফেল্ড বলেন, আমি জ্বলন অনুভব করতাম৷ সেই সঙ্গে মুখ, মুখের কোণ ও জিহ্বাও জ্বালা করত৷ খাওয়ার পর পেট প্রথমে শান্ত থাকত৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আবার জ্বলন শুরু হতো৷ বিশেষ করে একটু মসলাদার বা টক খেলেই সঙ্গে সঙ্গে অন্ত্রে কষ্ট হতো৷
পেট্রা সিলিয়া শেফার নামের এক পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন৷ তিনি সবার আগে বিস্তারিত সমস্যার কথা শোনেন৷ পেট্রাকে কিছু অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ দেওয়া হয়৷ তার মধ্যে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের জন্য ট্যাবলেট এবং ওপরের ট্র্যাক্ট হিসেবে পরিচিত মুখ ও গলার অংশের জন্য এক তরল ওষুধও ছিল৷ সিলিয়া বলেন, সবাইকে আমরা অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ দিই না৷ যারা অনেক বছর ধরে ভুগছেন, যাদের জীবনযাত্রার ওপর কুপ্রভাব পড়ছে, শুধু এমন বিরল ক্ষেত্রেই সেটা প্রয়োগ করা হয়৷ তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য৷
তার জন্য তিনটি পরিবর্তন আনা জরুরি৷ প্রথমত চিনি এড়িয়ে চলতে হবে৷ দ্বিতীয়ত পাউরুটি, নুডেলস, ভাত ও আলুর মতো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাযুক্ত খাবারও কম খেতে হবে এবং তৃতীয়ত প্রতিদিন দই ও বাটার মিল্ক বা কেফিনের মতো প্রিবায়োটিক খাবার খেতে হবে৷
অন্ত্রের ছত্রাক যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গবেষকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত৷ এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি৷ তবে আদর্শ অবস্থা সম্পর্কে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে৷ গবেষকরা দ্রুত সে বিষয়ে আরও জ্ঞানার্জনের আশা করছেন৷