আফিয়া সিদ্দিকীর বিষয়ে নতুন তথ্য পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বেলুচ বলেছেন, ড. আফিয়া সিদ্দিকীর ঘটনাটি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে একজন দণ্ডিত ব্যক্তি কেবল প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে ড. আফিয়া সিদ্দিকীর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এ কথা বলেন।খবর জিয়ো নিউজ উর্দুর।
মুমতাজ জাহরা বেলুচ বলেন, আফিয়া সিদ্দিকীর একটি বিশেষ ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। যে পরিস্থিতিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং শাস্তি দেওয়া হয়েছিল তা দেশে একটি বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের এ মুখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কেবল প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন।ড. আফিয়া সিদ্দিকীর প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।
এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্দি থাকা আলোচিত ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো সাফল্য আসেনি। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসনের কাছে আফিয়ার মুক্তির জন্য রাজি করাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফিয়ার মানবিক মুক্তি চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তার ক্ষমা, মুক্তি এবং পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার জন্য তদবিরে মার্কিন সংসদ সদস্যদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগে এখনো কোনো সফলতা আসেনি।
ড. আফিয়াকে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল জেলা আদালত হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনিই প্রথম নারী যুক্তরাষ্ট্র যার বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছে কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হননি।
১৮ বছর বয়সে ডা. আফিয়া বোস্টনের ম্যাচাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে তার ভাই থাকতেন। পরে ব্রান্ডিস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নায়ুবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন তিনি। কিন্তু ২০০১ সালে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামিক সংগঠনগুলোকে অনুদান দেওয়ার অভিযোগে তিনি এফবিআইয়ের নজরদারিতে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ডা. আফিয়া আল-কায়েদায় যোগ দিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতাদের একজন খালিদ শেখ মোহাম্মদের পরিবারে বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে করাচিতে তিন সন্তানসহ নিখোঁজ হন ডা. আফিয়া। পাঁচ বছর পর আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে স্থানীয় বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, সে সময় তার এই দণ্ডাদেশ পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। আফিয়া পাক-মার্কিন গোপন চক্রান্তের শিকার বলে তার সমর্থকরা দাবি করে আসছিলেন।
তার দণ্ডাদেশের পর আল কায়েদার তৎকালীন উপপ্রধান এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুসলিমদের প্রতি ‘বদলা’ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
আফিয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাক-মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল।
এমনকি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তার নির্বাচনী প্রচারণায় আফিয়ার মুক্তির দাবি করেছিলেন।
গত বছরের শুরুতে ২০ বছর পর টেক্সাসের একটি কারা হাসপাতালে আফিয়াকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তার বোন ফৌজিয়া সিদ্দিকি। পাকিস্তানে ফেরার পর ফৌজিয়া জানান, তাকে ‘দূর থেকে’ চার ঘণ্টার জন্য দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় ড. আফিয়ার শারীরিক অবস্থা তার কাছে ভালো মনে হয়নি।