বার্নিং ইস্যুগুলোতে কী বলছেন হ্যারিস-ট্রাম্প
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
ফাইল ছবি
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রধান দুই প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট দলের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। নির্বাচনি প্রচারে বা তার আগে গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দুজনেই। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ভোটাররা। এর আগে দেখে নেওয়া যাক, প্রধান বিষয়গুলোতে ট্রাম্প ও হ্যারিস কী বলছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন
গত আগস্ট মাসে ডেমোক্র্যাটদের কনভেনশনে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেন ও ন্যাটোর শরিকদের পাশে শক্তভাবে দাঁড়াবেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে।
হ্যারিসের প্রচার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি ইউক্রেন নিয়ে আবিশ্ব মতকে সুসংহত করতে সাহায্য করেছেন। তিনি ৫০টি দেশকে বোঝাতে পেরেছেন, পুতিনের ভয়ংকর আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার ইউক্রেনের আছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটোর যে শরিক তার আর্থিক দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণ করবে না, সেই অপরাধী দেশকে রক্ষা করা দূরে থাক, তাদের আক্রমণ করার জন্য তিনি রাশিয়াকে উৎসাহ দেবেন। পরে তিনি নিজের মত কিছুটা নরম করেছেন।
তবে তিনি এটাও বলেছেন, যদি ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষাখাতে তাদের খরচ না বাড়ায়, তাহলে তিনি এই জোট থেকে বেরিয়ে আসবেন।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যদি ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জেতেন, তাহলে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। কী করে তিনি এ লক্ষ্যে পৌঁছবেন তা তিনি জানাননি।
সেপ্টেম্বরে একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি আমার পরিকল্পনার কথা আপনাদের জানাতে পারব না। কারণ আগেভাগে জানিয়ে দিলে, তখন তা আমি রূপায়ণ করতে পারব না। চমক দেখাতে গিয়ে ব্যর্থতার মুখে পড়তে হবে।
ইসরাইল-হামাস
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো কমলা হ্যারিস বলেছেন, তিনি হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধকে সমর্থন করেন। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, ইইউ সহ কয়েকটি দেশ।
হ্যারিস বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইসরাইলের এই আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করবেন। তবে গাজার মানুষের দুর্দশা নিয়ে বাইডেনের থেকে অনেক বেশি সোচ্চার। তিনি এই দুর্দশা বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাইতে তিনি যুদ্ধবিরতি, বন্দিদের মুক্তি এবং দুই রাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন। মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় তিনি ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেছেন।
২০২৪ সালের এপ্রিলে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরাইলের উচিত, গাজায় তাদের আক্রমণ দ্রুত বন্ধ করা। কারণ তারা পিআর যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে। তিনি শান্তির পথে যাওয়ার জন্য এবং মানুষকে হত্যা বন্ধ করার কথা বলেছিলেন।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট হতে পারলে তিনি দ্রুত বিরোধের অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। তবে কিভাবে, সেই পরিকল্পনার কথা জানাননি।
গর্ভপাত
গর্ভপাতের একজন বড় সমর্থক কমলা হ্যারিস বলেছেন, দেশজুড়ে মেয়েরা যাতে এই অধিকার পান তার জন্য লড়বেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে রাজ্য নয়, জাতীয় স্তরে যাতে গর্ভপাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তার চেষ্টা করবেন। ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রাজ্যগুলো এই বিতর্কিত বিষয়ে নিজেদের মতো করে আইন করতে পারে।
হ্যারিসের প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি ও তার রানিং মেট টিম ওয়ালজ বিশ্বাস করেন, মেয়েরা তাদের শরীর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের কী করতে হবে, তা সরকারকে বলে দিতে হবে না।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় সুপ্রিমকোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করেছিলেন। ফলে ২০২০ সালে সুপ্রিমকোর্টে রক্ষণশীল বিচারপতিদের সংখ্যাধিক্য হয়ে যায়। এর পরই গর্ভপাত নিয়ে আগের নির্দেশ বদল করে নতুন রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প ওয়াশিংটনে গর্ভপাত-বিরোধী ‘মার্চ ফর লাইফ’ প্রতিবাদে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি ক্ষমতায় থাকার সময় এ কাজ করেন।
ধর্মপ্রাণ আমেরিকানরা ট্রাম্পের ভোট ব্যাংকের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ট্রাম্প জাতীয় স্তরে গর্ভপাত বন্ধের দাবি করেননি, তবে বরাবর বলে এসেছেন, এ অধিকার রাজ্যের হাতে থাকা দরকার।
অর্থনীতি
কমলা হ্যারিসের প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু মধ্যবিত্তরা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে, যেখানে সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন এবং তাদের সফল হওয়ার সুযোগ থাকবে।
তার প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, হ্যারিসের পরিকল্পনা হলো, ১০ কোটি কর্মরত অ্যামেরিকানের জন্য কর ছাঁটাই করা হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য, আবাসন, প্রতিদিনের জিনিসের দাম কমানো হবে। মানুষ যাতে স্বচ্ছন্দ্যে বাড়ি ভাড়ার অর্থ দিতে পারে, তিনি সেই ব্যবস্থা করতে চান। আরও মানুষ যাতে বাড়ি কিনতে পারে, তাদের ছোট ব্যবসাকে বড় করতে পারে, তিনি সেই সাহায্য করবেন।
অভিবাসন
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যারিসের ওপরই অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হ্যারিস যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হ্যারিস বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে তিনি দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত সুরক্ষা বিলে সই করে তাকে আইনে পরিণত করবেন। ট্রাম্পের চাপে রিপাবলাকিনরা এই বিল মার্কিন কংগ্রেসে পাশ করাতে দেয়নি। এই আইন পাশ হলে মাদক ধরার জন্য নতুন প্রযুক্তি চালু করা হবে ও সুরক্ষা কর্মী নিয়োগ করা হবে।
হ্যারিসের প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রিপাবলিকানরা এই বিলকে আটকে দিয়েছে। তারা বলেছে, এই বিলে যথেষ্ট ব্যবস্থার কথা বলা নেই।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি হলো, তিনি নির্বাচিত হলে অভিবাসীদের বিপুল সংখ্যায় ফেরত পাঠাবেন। মার্কিন ইতিহাসে এই ঘটনা এত বড় আকারে আগে হয়নি। তিনি আবার কঠোর অভিবাসন আইন চালু করতে চান। তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন ইরান, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেনের মতো মুসিলম-প্রধান দেশের মানুষদের উপর ট্র্যাভেল ব্যান চালু করা হয়েছিল। এছাড়া ট্রাম্প বেশ কয়েক হাজার সেনাকে দক্ষিণ সীমান্তে পাঠাতে চান।
পরিবেশ
প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, হ্যারিসের পরিকল্পনা হলো, সবার জন্য শুদ্ধ জল ও বাতাস নিশ্চিত করা। এজন্য যারা দূষণ ছড়াচ্ছে, তাদের দায়ী করতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্টের মধ্যে থাকবে। তিনি ক্লিন এনার্জি ইকনমি গড়ে তুলতে চান।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও এই কাজ করেছিলেন। তার প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রিপাবলিকানরা মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য পরমাণু সহ সব সোর্স থেকে শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করবে।
এলজিবিটিকিউপ্লাস অধিকার
২০ বছর আগে ২০০৪ সালে হ্যারিস স্যান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি থাকার সময় কিছু সমলিঙ্গ বিয়েতে তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার প্রচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য, আবাসন, শিক্ষায় এবজিবিটিকিউ প্লাসদের প্রতি যাতে কোনোরকম বিভেদ না করা হয় সেজন্য আইন করা হবে।
বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন এলজিবিটিকিউ প্লাসের বিরুদ্ধে কিছু রাজ্যের আইন ব্লক করে দিয়েছিল এবং ট্রাম্পের আমলের সিদ্ধান্তও বদলে দেয়। ট্রাম্প সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সেটা প্রত্যাহার করা হয়।
ট্রাম্প সেই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে চান। তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার খারিজ করতে চান। আবার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি লিঙ্গ পরিবর্তনের সব প্রোগ্রাম বাতিল করতে চান। তিনি ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বাদ দিতে চান। তিনি এই নিয়ম চালু করতে চান যে, মার্কিন সরকার জন্মসূত্রে পুরুষ ও মেয়েদের একমাত্র স্বীকৃতি দেবে।