Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

মার্কিন নির্বাচন

ভোটে জিতলেও ফল পালটে যেতে পারে ইলেকটোরাল কলেজে, কীভাবে?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম

ভোটে জিতলেও ফল পালটে যেতে পারে ইলেকটোরাল কলেজে, কীভাবে?

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে পাঁচই নভেম্বর। কিন্তু যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হল ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যেভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। 

বর্তমানে ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসের মধ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচনী শোডাউন যত এগিয়ে আসছে, এই রহস্যময় এবং কারও কারও কাছে পুরানো ব্যবস্থার নিয়মগুলো আবার ফোকাসে ফিরে আসছে।

ইলেক্টোরাল কলেজ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে যাবেন। ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮।

মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

কীভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ?

প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি করে ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, যা ওই অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার মোটামুটিভাবে সমানুপাতিক হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে সর্বাধিক ৫৪টি, এবং ভায়োমিং, আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটা (এবং ওয়াশিংটন ডিসি)-র মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুবই কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলিই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও, তাহলেও জয়ী প্রার্থী অতগুলি ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন।

দেশব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও কি কেউ পরাজিত হতে পারে?

হ্যাঁ, সেটা সম্ভব। একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়ত কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ কম ভোট পেয়েও মিসেস ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে আল গোরকে পরাজিত করেছিলেন, যদিও সাধারণ ভোটে তার জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লক্ষেরও বেশি।

ওই দুজনের আগে আর মাত্র তিনজন সাধারণ ভোটে না জিতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সেগুলো উনবিংশ শতাব্দীর ঘটনা।

একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ কেন বলা হয়?

‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। অন্যদিকে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ‘ইলেকটরস্’ বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়, এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেটের ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: 

যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সেনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। এই প্রথা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি মানুষের ভোটেই।

যে প্রার্থী অঙ্গরাজ্যে জয়ী হবেন, তাকেই কী ভোট দিতে বাধ্য নির্বাচকরা?

কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নির্বাচকদের আইনগতভাবে সেই স্বাধীনতা আছে যে সাধারণ ভোটাররা কাকে পছন্দ করেছেন, তার ওপরে নির্ভর না করে নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তবে প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন যে প্রার্থী, তাকেই নির্বাচকরা তারা ভোট দিয়েছেন।

অঙ্গরাজ্য থেকে যাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যদি কোনও নির্বাচক ভোট দেন, তাকে ‘ফেইথলেস’ বা অবিশ্বাসী বলা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এভাবেই সাতটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দেওয়া হয়েছিল, তবে নির্বাচনের ফলাফলে তার কোনও প্রভাব পড়ে নি। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে ‘ফেইথলেস’ নির্বাচকদের জরিমানা করা বা মামলা দেওয়া হতে পারে।

ইলেক্টোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে?

কোনও ক্ষেত্রে যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এই ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে ১৮২৪ সালে। ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট চারজন প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান নি। বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দুটির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওইরকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

কারা এই ৫৩৮ জন?

বেশিরভাগই স্থানীয় নির্বাচিত কর্মকর্তা বা দলীয় নেতা, তবে তাদের নাম ব্যালটে দেখা যায় না।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে (রাজ্যের জনসংখ্যার উপর নির্ভরশীল একটি সংখ্যা) প্লাস সিনেটে (আকার নির্বিশেষে প্রতিটি রাজ্যে দু'জন) যতজন সদস্য রয়েছে ততজন নির্বাচক রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৪ টি নির্বাচক রয়েছে; টেক্সাসে রয়েছে ৪০টি; এবং বিরল জনবহুল আলাস্কা, ডেলাওয়্যার, ভারমন্ট এবং ওয়াইওমিংয়ে মাত্র তিনটি করে রয়েছে।

কংগ্রেসে ভোট না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনেও তিনজন ইলেকটোরাল ভোটার রয়েছে।

সংবিধান রাজ্যগুলোকে তাদের ভোটারদের ভোট কীভাবে দেওয়া হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। দুটি বাদে প্রতিটি রাজ্যে (নেব্রাস্কা এবং মেইন, যা কংগ্রেসনাল জেলা দ্বারা কিছু নির্বাচককে পুরষ্কার দেয়), সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী তাত্ত্বিকভাবে সেই রাজ্যের সমস্ত নির্বাচকদের জয় করেন।

২০১৬ সালের নভেম্বরে ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন, যা প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের চেয়ে অনেক বেশি।

পপুলার ভোটে হারলেও হোয়াইট হাউসে জয়ী হওয়ার অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নজিরবিহীন ছিল না।

ইলেক্টোরাল কলেজের সময়সূচী

নির্বাচকরা ১৭ ডিসেম্বর তাদের রাজ্যের রাজধানীতে জড়ো হবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির জন্য ভোট দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে বলা আছে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম মঙ্গলবার তারা মিলিত হয়ে ভোট দেন।

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস বিজয়ীকে প্রত্যয়িত করার জন্য সমবেত হবে - এই চক্রের একটি স্নায়বিক ইভেন্ট, চার বছর পরে ট্রাম্প সমর্থকদের একটি জনতা শংসাপত্র আটকানোর চেষ্টা করে ইউএস ক্যাপিটলে আক্রমণ করেছিল।

তবে পার্থক্য আছে। গতবার, এটি ছিল রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যিনি সিনেটের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শংসাপত্রের তদারকি করার জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন। ট্রাম্প ও জনতার প্রবল চাপ উপেক্ষা করে তিনি বাইডেনের জয়কে প্রত্যয়িত করেন।

এবার সিনেটের সভাপতি - সাধারণত প্রো ফর্মা শংসাপত্রের তত্ত্বাবধান করবেন - বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ছাড়া আর কেউ হবেন না। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম