সুদানের এল গেজিরা রাজ্যে প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) চালানো এক হামলায় অন্তত ১২৪ জন নিহত এবং আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
শুক্রবার রাতে আরএসএফের সবশেষ আক্রমণটি ছিল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অঞ্চলে চালানো আরএসএফের সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দেশটির প্রো-ডেমোক্রেসি অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, এটি ছিল গত ১৮ মাস ধরে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা এবং উচ্চ-পর্যায়ের আরএসএফ কর্মকর্তা আবুআগলা কাইকালের আত্মসমর্পণের পর প্রতিশোধমূলক আক্রমণের অংশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, আরএসএফ বিভিন্ন গ্রাম আক্রমণ করে ঘরবাড়ি লুট করেছে এবং সহস্রাধিক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক যে, আহতদের চিকিৎসা করা বা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ওই অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ ওয়াদ মাদানি প্রতিরোধ কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে আরএসএফ বাহিনী আলসেরিহা গ্রামে প্রবেশ করে এবং উচ্চ ভবনের ওপর থেকে অস্ত্র ও কামান স্থাপন করে নিরস্ত্র নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে।
গেজিরা কনফারেন্স নামে স্থানীয় এক এনজিও সংস্থা জানিয়েছে, এই আক্রমণে ১২০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং ২ শতাধিক আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
স্থানীয় ওয়াদ মাদানি রেজিস্ট্যান্স কমিটির মতে, আরএসএফের সেনারা এখন পর্যন্ত বহু গ্রাম আক্রমণ করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে বলা হয়েছে, তাদের হাতে নিরীহ মানুষ ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হচ্ছে।
কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আরএসএফের সেনারা এক ব্যক্তিকে তার দাড়ি ধরে টানছে এবং অন্য পুরুষদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গালিগালাজ করছে।
যদিও এ অভিযোগগুলো রয়টার্স এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
গেজিরার জনগণ এই সহিংসতার মাধ্যমে ব্যাপক গণহত্যার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে সুদানের চিকিৎসক ইউনিয়ন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতির প্রতি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছে, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ আরএসএফের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে।
সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরএসএফের এই ‘প্রতিশোধমূলক অভিযানের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে ‘গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের শামিল’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) ১৪ অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২৪,৮৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স ও মেহের নিউজ এজেন্সি