পাঁচ বছর পর একমঞ্চে মোদি-মাসুদ-পুতিন-শি, কি কথা হলো তাদের?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
রাশিয়ার কাজানে শুরু হয়েছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে মূল বৈঠকের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
এছাড়াও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদি। গত জুলাইয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটাই প্রথম বৈঠক মাসুদের। তবে কূটনৈতিক মহলের চোখ এখন ভারত-চীন বৈঠকের দিকে।
মঙ্গলবারই পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে মোদির। আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ।
এর আগেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন মোদি। আর সে কারণে গত এক বছরে তিনি একাধিকবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও।
এদিনের বৈঠকেও মোদি ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলেছেন পুতিনকে। প্রয়োজনে ভারত সম্ভাব্য সব পন্থায় মধ্যস্থতা করতে রাজি বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও ভারত-রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে দুপক্ষের। দুই দেশই সমানভাবে সহযোগিতাপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে ঠিক হয়েছে।
একই সঙ্গে ব্রিকস সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে আয়োজন করার জন্য পুতিনকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন মোদি।
মাসুদের সঙ্গে বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির বৈঠকের দিকে চোখ ছিল অনেকেরই। কারণ, সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। ইসরাইলে সরাসরি আক্রমণ চালিয়েছে ইরান। এই পরিস্থিতিতে মোদি মাসুদকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছে ভারত। এক্ষেত্রেও ভারত শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা করতে রাজি। শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন মোদি।
বৈঠকের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বেই ভারত একটি বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। সব দেশের সঙ্গেই তার ভালো সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার বন্দর এবং আইএনএসটি প্রকল্প
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই রাষ্ট্রপ্রধান দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেন। আলোচনায় উঠে আসে চাবাহার বন্দরের প্রসঙ্গও। ভারতের সঙ্গে এই বন্দরের প্রকল্প হওয়ার কথা ইরানে। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটি) নিয়েও মোদি-মাসুদের মধ্যে কথা হয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইরানে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়েও কথা বলেছেন মোদি।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক
বুধবার ব্রিকসের মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিংয়ে বৈঠক হয়েছে।
শেষবার দুই নেতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৯ সালে ভারতের মহাবলীপুরমে। মাঝে পার হয়েছে ৫টি বছর। পার হয়েছে গালওয়ান অধ্যায়ও।
এবার ২০২৪ সালে দুই নেতার সাক্ষাৎ হলো রাশিয়ার কাজানে, ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে। বুধবার নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনপিং বৈঠকে বসেন।
লাদাখ সংঘাত পরবর্তী সময়ে এই বৈঠক কূটনৈতিক দিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। মোদি-জিনপিং বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছেন দুই নেতা। সেই সঙ্গে স্থানীয় শান্তি রক্ষার্থে এবং বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষার জন্য দুই নেতা স্থায়ী সম্পর্কের পক্ষে সহমত পোষণ করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই দ্বপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ। এছাড়া দুই পক্ষের সরকারি কর্মকর্তারাই স্ট্র্যাটেজিক সংযোগ বাড়াতে পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার কথা বলা হয়েছে।
ব্রিকসের হাত ধরে মোদি এবং শির মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ফলপ্রসূ বিষয় আদান-প্রদানের ও সহযোগিতার একটি জায়াগা ছিল বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছেন যে, পরের বছর আয়োজিত হতে চলা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে চীনকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাতে চলেছে ভারত।
এর আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন ও ভারতের সংযোগ-সহযোগিতা মজবুত করা প্রয়োজন। এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী শি জিনপিং বলেন, চীন ও ভারতের উচিত দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা।
এদিকে চীনের তরফে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে সহমতে পৌঁছানো গেছে। ভারতের সঙ্গে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমরা কাজ করব’।
এদিকে ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সীমান্তে উত্তেজনা প্রবল ছিল। মঙ্গলবারই দুই দেশ জানিয়েছে, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সেনা সরিয়ে নিচ্ছে দুই দেশ। ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের আগে সীমান্তে যে পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার বৈঠকের আগে চীনের তরফে বলা হয়েছে, ভারত-চীন সুসম্পর্ক ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এবিষয়ে সদর্থক। সীমান্ত নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তাকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে ও হিন্দুস্তান টাইমস