তুর্কি লেখকের দাবি
ইসরাইলের ‘আসল লক্ষ্য’ ইস্তাম্বুল
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে জোর দিয়ে তুর্কি গবেষক ও লেখক হায়াতি সির দাবি করেছেন যে, ইসরাইলের গাজা যুদ্ধের আসল লক্ষ্য তুরস্ক এবং বিশেষভাবে ইস্তাম্বুল।
তিনি ইসরাইলি সরকারের ‘গোপন পরিকল্পনা’ সম্পর্কে কিছু বিতর্কিত এবং অনুমানমূলক মতামত প্রকাশ করেছেন।
হায়াতির দাবি, ইহুদিরা ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ প্রতিষ্ঠার জন্য বহু বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, এই যুদ্ধের প্রকৃত লক্ষ্য মূলত তুরস্ক।
তুর্কি এই গবেষক বলেন, ‘ইসরাইল শুধু গাজা দখল করছে না, বরং বিশ্বের সমস্ত সরকারকেই তাদের নিয়ন্ত্রণে আনছে’।
হায়াতি আরও দাবি করে বলেন, ‘ইসরাইলের বর্তমান পরিকল্পনা থিওডর হার্জলের ডায়েরিতেই লেখা রয়েছে। আমরা আসলে ইসরাইলের বহু বছরের সেই কৌশল সম্পর্কে অবহেলা করে যাচ্ছি’।
এ বিষয়ে তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, সামরিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা পর্যায়ে একটি গুরুতর প্রস্তুতি প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত ছিল, কিন্তু তা এখনও হয়নি।
হায়াতি দাবি করে বলেন, ইসরাইলকে সমর্থনকারী শক্তিগুলো—যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইরান এবং রাশিয়া- সবই ‘মেসিয়ানিক কোয়ালিশনের’ অংশ এবং তারা তুরস্কের বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করবে। যদিও ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে আপাতত একটি বিরোধ চলছে। যা মূলত আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে, তবে সবারই আসল লক্ষ্য হলো ইস্তাম্বুল।
‘ইস্তাম্বুলের আধ্যাত্মিক বিজয়’
ইস্তাম্বুলকে একটি বিজয়ের শহর স্মরণ করিয়ে দিয়ে হায়াতি বলেন, ‘ইস্তাম্বুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইঙ্গিতের মাধ্যমে বিজিত হয়েছিল এবং আসল রহস্য হলো ইস্তাম্বুলের আধ্যাত্মিক বিজয়ের প্রস্তুতি চলছে। এ শহরের ভূগর্ভস্থ পথগুলো জেরুজালেমের সঙ্গে যুক্ত। আর এটি বুঝতে পারলে ‘টেম্পলার’রা কেন এই শহরটি নিয়ে এতটা আগ্রহী, তা বোঝা যাবে’।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের প্রাচীন সব গোপন সমাজের প্রতিষ্ঠা ইস্তাম্বুলে হয়েছিল এবং এখনো তাদের অনুষ্ঠানিক আচার এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। ইস্তাম্বুলের সাধু ও আল-আকসা মসজিদের রক্ষকদের উপস্থিতি না থাকলে, ভূগর্ভীয় প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ইস্তাম্বুল ধ্বংস হয়ে যেত। তবে তারা এই লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। ভূমিকম্পের সতর্কতাগুলো এরই অংশ। এর উদ্দেশ্য হলো ইস্তাম্বুলকে খালি করা, তারা আমাদের শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে।
ইস্তাম্বুল সক্রিয় ফল্ট লাইনে অবস্থিত এবং বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে এই শহরে ৭.০-এর ওপরে একটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তবে ইস্তাম্বুলের আধ্যাত্মিক ঢাল ধ্বংস না করে, তারা আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করতে পারবে না। আমাদের দেশের ওপর আক্রমণের প্রকৃত কারণ এটিই। তারা কাবা, আল-আকসা মসজিদ এবং ইস্তাম্বুলকে তাদের পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। সার্ন (CERN) প্রস্তুত আছে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ও প্রযুক্তির দখল
হায়াতি বলেন, এটি বিজ্ঞান নয়; এটি ‘অন্ধকার বিজ্ঞান’, নাসাও একইভাবে কাজ করছে।
ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এখন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত সবচেয়ে কার্যকরী যুদ্ধ কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইলেকট্রনিক গোয়েন্দাগিরি এবং আক্রমণ পদ্ধতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। আধুনিক যুদ্ধযানগুলো, যেমন EC-130H বিমান, এ ধরনের সরঞ্জামগুলোতে প্রবেশ করতে এবং এমনকি সেগুলোকে বিঘ্নিত করতে সক্ষম।
সম্প্রতি লেবাননে ইসরাইলের পেজার হামলার কথা উল্লেখ করে হায়াতি বলেন, এখন যুদ্ধগুলো প্রযুক্তিগতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বের করপোরেট রাষ্ট্রগুলো প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে; তাদের প্রকৃত অস্ত্র হলো আপনার হাতে থাকা ফোনগুলো। তারা আপনার সব কথা শোনে, আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আপনাকে প্রভাবিত করে সাবলিমিনাল বার্তার মাধ্যমে। আপনি তাদের থেকে কিছুই লুকাতে পারবেন না।
হায়াতি সতর্ক করে বলেন, তারা আপনাকে দেখতে পারে এবং ইচ্ছা করলে এই ডিভাইসগুলোকে বোমার মতো বিস্ফোরিত করতে পারে। বাড়ির সমস্ত ওয়াই-ফাই-যুক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস একই ধরনের বিপদ বয়ে আনে। ফাইভ জি, স্মার্ট হোম, শহর, ফোন এবং কর্মস্থলগুলো বোমার মতো কাজ করতে পারে।
এখন তো সিক্স-জি আসছে। তারা থামবে না যতক্ষণ না সবাইকে ডিজিটাল দাসে পরিণত করতে পারে। লেবানন ছিল একটি পরীক্ষা মাত্র। লক্ষ্য হলো নতুন বিশ্বব্যবস্থা এবং গ্রেট রিসেট। এ অবস্থায় সব দেশকেই শিক্ষা নিতে হবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
তুর্কি এই গবেষক দাবি করেন, ইস্তাম্বুলের অধীনে প্রাচীন গোপন সমাজগুলোর কার্যক্রম রয়েছে এবং তারা এখানে এখনো তাদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। ইস্তাম্বুলের পবিত্র রক্ষাকারীদের জন্যই এই শহরটি এখনো সুরক্ষিত আছে।
হায়াতি বলেন, ইসরাইল যদি ইস্তাম্বুলের আধ্যাত্মিক সুরক্ষা ভেঙে দিতে না পারে, তবে তারা আল-আকসা মসজিদকে ধ্বংস করতে পারবে না। ইস্তাম্বুলকে খালি করার জন্য ভূমিকম্পের সতর্কতাও এরই একটি অংশ।
নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
নতুন বিশ্বব্যবস্থার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তুর্কি এই লেখক বলেন, বিশ্ব শাসন মেসিয়ানিক কোয়ালিশনে হস্তান্তর হচ্ছে এবং আপনার পক্ষে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বোঝা সম্ভব নয়, যদি ধর্মতত্ত্ব জানা না থাকে।
তিনি তার লেখায় একটি এমন পৃথিবীর চিত্র তুলে ধরেন, যেখানে একটি একক ব্যবস্থা শাসন করছে—যেমন একটি রাষ্ট্র, একটি পরিবার, একটি ভবিষ্যৎ, একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, একটি সেনাবাহিনী এবং একটি ধর্ম।
হায়াতি বলেন, আমরা দ্রুত এমন একটি পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে যানবাহন, ইন্টারনেট এবং শক্তি মহাকাশ থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে। উদ্দেশ্য হলো যোগাযোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, যা দেশগুলোর স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে।
দুষ্টতার মুখে ন্যায়বানরা কিছু না করায় অত্যাচার বৃদ্ধি পাবে বলেও উল্লেখ করে তুর্কি এই গবেষক। তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে দাবি করেন যে, নতুন ভাইরাস, খাদ্য সংকট, পানির অভাব, সংকর বীজ, কার্বন কর, জলবায়ু আইন এবং পানির নতুন নিয়মাবলী আসন্ন এবং এগুলো ধারাবাহিকভাবেই ঘটবে।
মেসিয়ানিক পরিকল্পনার জবাবে হায়াতি বলেন, ইসলামের পতাকাবাহীরা, তুর্কি মুসলমানরা এবং যারা উম্মাহর চেতনা বুকে ধারণ করেন, তারা আবার জেগে উঠবেন এবং ইস্তাম্বুলের প্রকৃত বিজয় তখনই শুরু হবে।
পরিশেষে তিনি বলেন, আমরা অত্যাচারের শক্তি সম্পর্কে জানি কিন্তু আমরা একে উপেক্ষা করি।
তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) থাকলে আমাদের প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। বিশ্বের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দখলের পুরোটাই ধর্মতাত্ত্বিক। এর জন্য একটি একেশ্বরবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।
হায়াতির আহ্বান, ‘ডিজিটাল বিশ্ব তার সমস্ত অস্ত্র নিয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাই এখনই আমাদের মানবতা রক্ষা করতে এবং প্রতিরোধ করতে জেগে উঠতে হবে’।
(ডেইলি সাবাহ-তে প্রকাশিত তুর্কি লেখক ও গবেষক হায়াতি সিরের কলাম অবলম্বনে)