যেভাবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সিনওয়ারের অস্তিত্ব খুঁজে পায় ইসরাইল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১০ এএম
বুধবার (১৭ অক্টোবর) গাজায় নিহত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের লাশ বহন করে নিয়ে যায় ইসরাইলি সৈন্যরা। ছবি: টাইমস অব ইসরাইল
গত আগস্টের শেষ দিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি টানেল থেকে ৬ জন জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল ইসরাইলি বাহিনী। আর ওই টানেল থেকে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ইসরাইলি সেনারা। যেখানে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ডিএনএ খুঁজে পেয়েছিল ইসরাইল।
টাইমস অব ইসরাইল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যে ভবনে হত্যা করা হয়েছে, সেখান থেকে ওই টানেলের দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েকশ মিটার।
ওই সময় আইডিএফ এবং শিন বেথ বাহিনী পুরো টানেলটি অনুসন্ধান করছিল যেখানে ৬ জিম্মিকে হত্যা করা হয়েছিল। ইসরাইলি বাহিনী সেখানে একটি কক্ষ খুঁজে পেয়েছিল, তারা বিশ্বাস করেছিল যে হামাসের সিনিয়র কমান্ডাররা এটি ব্যবহার করতে পারেন।
তারা আন্ডারগ্রাউন্ড রুম থেকে ডিএনএ নমুনা নিয়েছিল এবং দেখেছিল যে এর কিছু অংশ সিনওয়ারের ছিল। এর অর্থ, ওই টানেলে সিনওয়ারের আসা যাওয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পায় ইসরাইল।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে অভিযুক্ত করে আসছিল ইসরাইল। হামাসের হাতে অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে এখনো অন্তত ১০০ জন জিম্মি গাজায় রয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার যখন সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইসরাইলি কর্মকর্তারা দ্রুত উল্লেখ করে যে তার আশেপাশে কোনো জিম্মি পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চ্যানেল ১২-এর একটি অসমর্থিত সূত্রে বলা হয়েছে, ওই টানেলে ৬ জিম্মির সঙ্গে লুকিয়ে ছিল সিনওয়ার। বুধবার দুই দেহরক্ষীর সঙ্গে যেখানে নিহত হন সিনওয়ার, একই এলাকায় সেখানে জিম্মিদের আটক করে এর আগে হত্যা করা হয়েছিল।
এতে দাবি করা হয়, সিনওয়ার সম্ভবত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ জিম্মিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২৯ আগস্ট জিম্মিদের হত্যার প্রায় দুইদিন পর সেখানে ইসরাইলি সেনারা পৌঁছায়।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগরি তখন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের প্রাথমিক অনুমান হচ্ছে, আমরা (জিম্মিদের) তাদের কাছে পৌঁছানোর অল্প সময় আগে হামাসের সন্ত্রাসীরা তাদের নৃশংসভাবে খুন করেছে।’
এদিকে এক বিবৃতিতে হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মি ইসরাইলিদের পরিবারের সদস্যরা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহতের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জিম্মি পরিবারদের সংগঠন বলেছে, ‘ফোরাম সিনওয়ারকে নির্মূল করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশংসা করে, সে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় গণহত্যার পরিকল্পনা করেছিল’।
‘তবে, আমরা এখনো বন্দি ১০১ জন পুরুষ, নারী, বয়স্ক এবং শিশুদের ভাগ্যের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা ইসরাইল সরকার, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই সামরিক অর্জনকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে।’
গাজা যুদ্ধের শুরুতেই শিন বেথ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করে। ইউনিটটি গত এক বছর ধরে বিরামহীনভাবে কাজ করেও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। গাজায় যুদ্ধ শুরু করার সময় তেল আবিব হুমকি দিয়ে বলেছিল, তারা সিনওয়ারকে জীবিত কিংবা মৃত ধরে আনবে। অবশেষে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুর মুখে পড়লেন ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই হামাস নেতা।