দক্ষিণ কোরিয়াকে কিম জং উনের বোনের হুমকি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৭ এএম
ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি সময়ে উত্তর কোরিয়ায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং। দেশটির নেতৃত্বে ভাইয়ের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাকেও অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। নিজ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিম জং উন বরাবরই দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন। এবার ড্রোন উড়ানো নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে হুমকি দিলেন কিম ইয়ো জং।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কেআরটি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই হুমকি দেন তিনি।
এ সময় তিনি সিউলকে হুমকি দিয়ে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোন উত্তর কোরিয়ার আকাশে প্রবেশ করলে তার ফল হবে ভয়ংকর। আত্মরক্ষার জন্য তার দেশ সব সময়ই প্রস্তুত।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোনগুলো উত্তর কোরিয়া বিরোধী প্রচার চালাতে পাঠানো হয়েছিল। তাদের সামরিক বাহিনী সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করতে সক্ষম তারা। প্রতিবেশী দেশের আক্রমণের জবাব দিতে তারা প্রস্তুত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোন উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ডে আবার ধরা পড়লে সতর্কতা ছাড়াই সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মাস কয়েক আগেই ৩০০টি আবর্জনা ভর্তি বেলুন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছিল কিম জং উনের দেশের বিরুদ্ধে। তার ঠিক আগেই কিম ইয়ো জং সিউলকে উত্তেজনাপূর্ণ প্রচারের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমকে ইয়ো জং জানান, শত্রুরা পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য যত প্রস্তুত হবে, কোরিয়ার আশপাশে যত বেশি পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করবে, উত্তর কোরিয়া আত্মরক্ষার প্রস্তুতিও তত জোরদার হবে।
উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ৩৩ বছরের কিম ইয়ো। পলিটব্যুরোর সদস্যপদ পাওয়ার পর থেকে তাকে এক রকম ভাই কিমের ছায়াসঙ্গীই বলা যায়। ভাই-বোনদের মধ্যে তাকেই জং উনের ঘনিষ্ঠতম বলে মনে করা হয়।
কিম ইয়ো জং সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নারী। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের একজন ইয়ো জং। কিম সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্রও মনে করা হয় তাকে।
কিম ইয়ো প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি আকর্ষণ করেন ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে। সে বছর তিনি উত্তর কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। কিম ইয়ো হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন কিম পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন।
পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে কিময়ের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেই তালিকায় কিম ইয়োর নামও আছে।
আমেরিকার চোখরাঙানিকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে মাঝেমধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্রের নানা পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার বহর দেখে আর নিরাপত্তাজনিত চাপ মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ কোরিয়া।
গত ২৫ এপ্রিল এক সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিও স্বাক্ষর করেন তারা।
সেই ঘটনার রেশ টেনেই কিম ইয়ো হুঁশিয়ারি দেন, এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার নামে যদি কোনো একাধিক দেশ কোনো পদক্ষেপ করে, তবে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গুরুতর বিপদ দেখা দিতে পারে।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, উত্তর কোরিয়ার কাছে ৫০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ৭০-৯০টি পরমাণু অস্ত্র বানানোর রসদও রয়েছে তাদের হাতে। পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি ডুবোজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়েও কাজ করছে তারা।
কিম জংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্যতা কারও অজানা নয়। অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়াকে নানা পারমাণবিক সহায়তা করে আসছে মস্কো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিম জং তার দেশের নাগরিকদের পাঠিয়ে মস্কোকে সাহায্য করছেন, এমন দাবিও উঠেছে সম্প্রতি।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা