ইরানের বড় ধরনের নিরাপত্তা বিপর্যয়
নাসরুল্লাহ হত্যায় তদন্তের মুখে কুদস ফোর্স প্রধান ইসমাইল কানি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৭ পিএম
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের প্রধান ইসমাইল কানি বর্তমানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আছেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।
ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহতের পর ইরান বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) মিডল ইস্ট আইয়ের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। যা ছিল ইসরাইল বিরোধী জোট ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষের জন্য এক বড় ধাক্কা।
এ ঘটনার পর থেকেই ইরান সরকার সন্দেহ করছে যে, তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে। ওই হামলার পেছনে ইসরাইল কীভাবে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বের গতিবিধি এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হলো, তা নিয়েই গভীর অনুসন্ধান চলছে।
ইসমাইল কানি, যিনি ২০২০ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাসেম সোলাইমানির স্থলাভিষিক্ত হন। নাসরুল্লাহর হত্যার ঘটনার পর থেকে তিনি লেবাননেই অবস্থান করছিলেন। তবে সম্প্রতি তার সঙ্গে দুই দিনের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে যে, তিনি আহত বা নিহত হয়েছেন।
তবে ইরানের সূত্র জানায় যে, ইসমাইল কানি সুস্থ আছেন এবং হামলার শিকার হননি।
এ নিয়ে বাগদাদ, তেহরান এবং বৈরুতের ১০টি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছে যে, কানি ও তার টিম নজরদারির মধ্যে আছেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই সূত্রগুলোর মধ্যে শিয়া নেতারা এবং হিজবুল্লাহ ও আইআরজিসির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার পর, ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্দেহের মুখে পড়েছে।
গত ৪ অক্টোবর আরেকটি ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শূরা কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেওয়া হাশেম সাফিয়েদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই বৈঠকে ইসমাইল কানিও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি শেষ মুহূর্তে তার অংশগ্রহণ বাতিল করেন।
সূত্র জানিয়েছে, ইরানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইসরাইলি গোয়েন্দাদের দ্বারা ফাঁস হয়েছে। বিশেষ করে কুদস ফোর্সের লেবানন-সংক্রান্ত ইউনিটগুলোতে এই সন্দেহ আরও প্রবল।
এসব ঘটনায় ইরানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সরাসরি তত্ত্বাবধানে তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
তদন্ত এখনও চলমান এবং ইরান এই ফাঁকফোকরের উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে কানির বর্তমান অবস্থান নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি এখন তেহরানে অথবা এখনও লেবাননে অবস্থান করছেন।
এই ঘটনার পর ইরান তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর তদন্ত চালাচ্ছে এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা বা নিরাপত্তা লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।সূত্র: মিডল ইস্ট আই