হাইতিতে সহিংসতা বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ কী?
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিতে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারও দেশটির ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার প্রতিফলন। কয়েক দিন আগে হাইতির কেন্দ্রীয় শহর পঁ-সঁডেতে এক ঘৃণ্য গ্যাং হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন রক্ষার জন্য পালিয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার ভোরের এই হামলাটি চালায় গ্রান গ্রিফ একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা। যেখানে কমপক্ষে ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যে শিশু ও নারীও ছিল।
গ্রান গ্রিফ গ্যাং কারা?
গ্রান গ্রিফ মূলত হাইতির স্বল্প পরিচিত গ্যাংগুলোর একটি, যার নেতৃত্ব দেন লাকসন এলান নামের এক ব্যক্তি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা একটি অডিও বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে, স্থানীয়রা একটি স্বেচ্ছাসেবী দলকে সহায়তা করেছিল, যারা কিনা গ্যাংয়ের সদস্যদেরকে কাছাকাছি একটি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করতে বাধা দিচ্ছিল।
সম্প্রতি ৩৬ বছর বয়সি এই এলান এবং সাবেক হাইতিয়ান এমপি প্রোফেন ভিক্টরের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যারা কিনা স্থানীয় অপরাধী গ্যাংগুলোকে সংগঠিত করতে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাইতিতে গ্যাংয়ের ক্ষমতা কীভাবে বাড়ছে?
হাইতির গ্যাংগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে। কারণ দেশটির সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং গ্যাংগুলো শাসন ও নিরাপত্তার শূন্যস্থান পূরণ করছে। গ্যাংগুলো মূলত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যেমন- চাঁদাবাজি, অস্ত্র এবং মাদক পাচার।
দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্যাং নেতাদের মধ্যে একজন হলেন জিমি ‘বারবিকিউ’ শেরিজিয়ার। যিনি একটা সময় দেশটির পুলিশ বাহিনীতে একজন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে শেরিজিয়ার একটি গ্যাং জোট গঠন করেন। যারা কিনা হাইতির রাজধানী শহরে আরও শক্তিশালী গ্যাংগুলোকে একত্রিত করে। এই জোট চলতি বছরের শুরুর দিকে হাইতির প্রধান জ্বালানি বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তারা পুরো দেশের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
সরকার কেনো গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ?
দীর্ঘদিন ধরে হাইতির সরকার জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল ও পর্যাপ্ত জনবলবিহীন পুলিশ বাহিনী বিদ্যমান গ্যাংগুলোর মোকাবেলা করতে পারছে না। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য সংকটের কারণে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তীব্র ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় নির্বাচনের দীর্ঘসূত্রিতাও সংকটকে বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতিসংঘের সমর্থনে নিরাপত্তা মিশনের কী অবস্থা?
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ হাইতিতে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার উদ্দেশ্য স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করা। তবে এখন পর্যন্ত এ বাহিনীর মাত্র ৪০০ সদস্য মোতায়েন হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই কেনিয়ার।
এছাড়া বেনিন, জ্যামাইকা, বাহামাস এবং বেলিজসহ আরও কয়েকটি দেশ মোট ২,৯০০ সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও তা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
গত দুই বছরে হাইতির গ্যাংগুলো রাজধানী শহর পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যা দেশটির মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
(রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে)