Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যেভাবে কাজ করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ পিএম

যেভাবে কাজ করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’

‘সিআইএ’, ‘মোসাদ’, ‘আইএসআই’ ও ‘র’ যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, পাকিস্তান ও ভারতের গুপ্তচর সংস্থার নাম।  দেশের হয়ে অন্য দেশের নানা রকম তথ্য গোপনে পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে এসব সংস্থাগুলো। বর্তমান সময়ে ‘র’ বহু প্রচলিত একটি নাম। ‘র’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। সংস্থার প্রথম প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন রামেশ্বর নাথ কাও আর শঙ্করণ নায়ার হন তার দু-নম্বর অফিসার।

ভারতের বহির্দেশীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর সাবেক প্রধান শঙ্করণ নায়ার তার বই ‘ইনসাইড আইবি অ্যান্ড র: দ্য রোলিং স্টোন দ্যাট গ্যাদার্ড মস’-এ লিখেছেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জে এন চৌধুরী প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্তরাও চৌহানকে জানিয়েছিলেন, ‘সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি কারণ আমাদের কাছে সঠিক গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। এসব তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অযোগ্য ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা আইবির গুপ্তচরদের ওপরে।’

ওই সমালোচনার একটি ফলাফল: নতুন একটি নতুন গোয়েন্দা সংস্থা, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত, যেটির ওপরে দায়িত্ব পড়ল দেশের বাইরের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।

যেভাবে শুরু হল ‘র’

১৯৭১ সাল থেকে রামনাথ কাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি ‘র’ এজেন্ট বেছে নেওয়ার প্রথা শুরু করেন।

ফলে ‘র’-এ কর্মরত অনেকের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুরা সেখানে চাকরি পেয়ে যান আর মজা করে সংস্থাটিকে ‘রিলেটেড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ বলা হত।

কিন্তু ১৯৭৩ সালের পর ওই সরাসরি নিয়োগের প্রক্রিয়া বদলে যায়। শুরু হয় সরাসরি নিযুক্ত কর্মকর্তাদের এক কঠিন প্রতিযোগিতা। তাদের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পার করতে হয়।

নীতিন গোখলে তার ‘আরএন কাও, জেন্টলম্যানস্ স্পাইমাস্টার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘প্রথমটি হত মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের ভোর তিনটের মধ্যে একটি জায়গায় আসতে বলা হত। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের অবজেক্টিভ টাইপ টেস্ট দেওয়া হত। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন, তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হত। ওই ইন্টারভিউ নিতেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক অফিসার।’

ওই ১৯৭৩ সালে ‘র’-তে যাদের নিয়োগ হয়েছিল, তাদেরই একজন জয়দেব রানাডে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে অবসর নেন।

তিনি বলছিলেন, পরের রাউন্ডে ‘র’-এর সিনিয়র কর্মকর্তা এনএন সন্তুক এবং শঙ্করণ নায়ার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। এই পর্যায়টি পাশ করার পরে আমরা মুখোমুখি হই পররাষ্ট্র সচিব, র-এর প্রধান আর এন কাও এবং একজন মনোবিজ্ঞানী সহ ছয় সদস্যের বোর্ডের। আমার সাক্ষাৎকার চলেছিল ৪৫ মিনিট।

রানাডে দুমাস পরে জানতে পারেন যে তিনি ‘র’-এ চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতাপ হেবলিকর, চক্রু সিনহা ও বিধান রাওয়ালও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

‘র’-এর বিশেষ সচিব পদ থেকে অবসর নেওয়া রানা ব্যানার্জী বলছিলেন, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে এরকম আরও কয়েকজনকে নেওয়া হয়েছিল ‘র’-এ যাদের নিয়ে স্পেশাল সার্ভিস গঠন করা হয়। পরে অজ্ঞাত কারণে এভাবে নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

‘এখন ৯৫ শতাংশেরও বেশি কর্মী ভারতীয় পুলিশ সেবা বা আইপিএস থেকে নির্বাচিত হন এবং অর্থনৈতিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজের জন্য কিছু কর্মকর্তাকে কাস্টমস এবং আয়কর বিভাগ থেকে নেওয়া হয়।’

পুলিশ বাহিনী থেকে গুপ্তচর নিয়োগ

‘র’ এখন যেভাবে কর্মকর্তা নিয়োগ করে, সেই বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে সংস্থার একটি অংশেরই সমালোচনা আছে।

গুপ্তচর সংস্থাটির সাবেক প্রধান বিক্রম সুদ তার বই ‘দ্য আনএন্ডিং গেম’-এ লিখেছেন, ‘যতদিনে কোনো ব্যক্তি আইপিএস অফিসার হচ্ছেন, ততদিনে তার বয়স মোটামুটি ২৭ বছর ছুঁতে যাচ্ছে। এর তিন বছর পর ‘র’-এ যোগ দিলে তার বয়স তখন ৩০ বা তার বেশি। ওই বয়সে নতুন কোনও পেশায় মানিয়ে নেওয়া কারও পক্ষেই কঠিন। এই বয়সকালে খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার পরিস্থিতিতে থাকে না কেউ।’

বিক্রম সুদ লিখেছেন, পুলিশ সার্ভিস থেকে গোয়েন্দা এজেন্সিতে নিয়োগ এখন আর অতটা কার্যকর পদ্ধতি নয়। এ এমন একটা পেশা, যেখানে ভাষার দক্ষতা এবং খবর বের করার শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ পুলিশের থাকে না। গুপ্তচরদের অর্থনৈতিক, সাইবার, বৈজ্ঞানিক এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে হবে, যে প্রশিক্ষণ আইপিএস অফিসারদের দেওয়া হয় না।

পরিচয় ফাঁস ও দেশ থেকে বহিষ্কার

নানা প্রশিক্ষণ বা নাম পরিচয় বদলের পরেও পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার একটা ভয় গুপ্তচরদের সবসময়ে থাকে। পেশাদার গুপ্তচরদের খুব তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করে ফেলা যায়।

রানা ব্যানার্জী বলছিলেন, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একটি কূটনৈতিক প্রোটোকল রয়েছে যে একে অপরের দেশে যে গুপ্তচরদের পাঠাবে, তাদের নাম আগে থেকেই অন্য দেশকে জানাতে হবে। এই সিদ্ধান্তও নেওয়া আছে যে আমরা একে অপরের গুপ্তচরদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করব না। যদি কেউ সীমা অতিক্রম করে কাজ করছেন দেখা যায়, তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়।

তিনি জানাচ্ছিলেন, পরিচয় প্রকাশ বা এক দেশ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয় সবসময়েই থাকে। কেউ যদি তিন বছরের পোস্টিংয়ে যান, তিনি তো সেদেশেই সন্তানের পড়াশোনার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু যদি ছমাসের মধ্যেই তাকে দ্রুত সেই দেশ ছাড়তে বলা হয়, তখন তো সেটা একটা চিন্তাজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম