নাসরুল্লাহ নিহত, যে বার্তা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ডা. মাসুদ পেজেশকিয়ান একটি বার্তা দিয়েছেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে দেওয়া ওই বার্তায় ইরানি প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, শহিদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অর্থাৎ তিনি শাহাদাতের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছেন। তার বীরত্ব, সাহসিকতা এবং নিরন্তর প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করার মতো শব্দ অপ্রতুল।
নাসরুল্লাহর শাহাদাত নিপীড়িত মানুষের হৃদয়ে এক বিরাট বেদনা উল্লেখ করে পেজেশকিয়ান বলেন, ইসলামের ইতিহাসে সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর নাম চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে যাবে না যে এই সন্ত্রাসী হামলার আদেশ নিউইয়র্ক থেকে জারি করা হয়েছিল এবং আমেরিকানরা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে জড়িত থাকা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারে না’।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হিজবুল্লাহ প্রধানের শাহাদাতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শহিদ হন। তিনি তার চূড়ান্ত অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন বলেই জানিয়েছে হিজবুল্লাহ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হিজবুল্লাহ শনিবার বিকালে এক বিবৃতিতে জানায়:
‘সুতরাং যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে তাদের আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা উচিত। বস্তুতঃ যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, অতঃপর সে নিহত হবে অথবা বিজয়ী, আমি তাকে শীঘ্রই মহা পুরস্কার দান করব। (সূরা নিসা: আয়াত-৭৪)
মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন।
আমাদের মহান শিক্ষক, প্রতিরোধ আন্দোলনের পথিকৃৎ, আল্লাহর একনিষ্ঠ সৎ বান্দা, সাহসী নেতা, প্রজ্ঞাবান ঈমানদার, দূরদর্শী ও মুমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে শাহাদাতের সুমহান কাফেলায় যোগ দিয়েছেন। এ যেন নবী-রাসূল ও শহিদ ইমামগণের পদতলে ঈমানের ঐশী যাত্রায় এক আলোকিত কারবালা।
লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার মাধ্যমে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছৈ গেছেন। তিনি প্রায় ৩২ বছর ধরে শহিদদের পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন এবং এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একের পর এক বিজয় উপহার দিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সালে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০০ সালে ইহুদিবাদীদের কবল থেকে লেবাননের মুক্তি থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিজয় তার সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে গাজার নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিই লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনকে ইসরাইল বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
সেইসঙ্গে আমরা আমাদের প্রতিরোধকামী জাতি, আমাদের ধৈর্যশীল ও মুজাহিদ জনগণ, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ, বিশ্বের সমস্ত মুক্ত ও নিপীড়িত মানুষ এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর সম্মানিত ও ধৈর্যশীল পরিবারকে অভিনন্দন জানাই। মহান আল্লাহ তাকে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার পথের একজন শহিদ হিসেবে কবুল করুন। তিনি ইমাম হুসাইনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করে বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদীদের আগ্রাসনে ইমামের শহিদি কাফেলায় শরীক হতে সক্ষম হয়েছেন।
আমরা হিজবুল্লাহর বর্তমান নেতৃত্ব এই আত্মোৎসর্গকারী মহান নেতা ও শহিদকে এই প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি যে, গাজা ও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে, লেবাননকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব’। সূত্র: ইরনা