Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না মোদির, ভারতের কূটনীতিতে পরিবর্তন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ এএম

ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না মোদির, ভারতের কূটনীতিতে পরিবর্তন

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পৃথিবীর দুই প্রান্তের ভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অভূতপূর্ব মিল রয়েছে। উগ্র ডানপন্থার প্রচার, সংবাদমাধ্যমের বিরোধিতা, ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও অভিবাসন বিরোধিতার পাশাপাশি দুজনেরই রয়েছে অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা।

প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০২০ সালে শেষ বৈঠক হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। দুইজনই একে অপরকে বিভিন্ন সময় ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।  জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু তাদের মধ্যে সেই সাক্ষাৎ হয়নি।  খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। কোয়াড (চতুর্দেশীয় অক্ষের) সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

তার মার্কিন সফরের কর্মসূচিতে একাধিক অনুষ্ঠান ছিল। ফিলাডেলফিয়া এবং নিউ ইয়র্কে বসবাসরত ভারতীয় কমিউনিটির সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেলাওয়ারে তার বাসভবনে নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের তরফে অনেক প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকর্ম ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ‘কোয়াড লিডার’দের (চতুর্দেশীয় অক্ষের শীর্ষস্থানীয়) সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন মোদি। জাতিসংঘে ‘বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের’ প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কথা বলেছেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন মোদি।

এদিকে, মোদির সফরের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করবেন। যদিও এই সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন?

সাক্ষাতের বিষয়ে কী বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তার সঙ্গে দেখা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে, তার (মোদির) যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা এই সাক্ষাতের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সেই সময় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি জানিয়েছিলেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

অর্থাৎ ট্রাম্প ও মোদির সাক্ষাতের বিষয়টি ‘নিশ্চিত’ বা ‘অস্বীকার’ কোনওটাই করেননি পররাষ্ট্র সচিব।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদির যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় কমিউনিটির সঙ্গে নিউইয়র্ক সিটি বা লং আইল্যান্ডে দেখা করার যে কর্মসূচি ছিল, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প পৌঁছাতে পারেন বলে তীব্র জল্পনা ছিল। যদিও তা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি ট্রাম্পকে হিউস্টনের ‘হাউডি মোদি’ সমাবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই কর্মসূচিতে ভারতীয় কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হন।

আবার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরে এসেছিলেন ট্রাম্প। তাকে স্বাগত জানাতে আহমেদাবাদে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ জড়ো হন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী একে অপরকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে এসেছেন।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন তাদের সাক্ষাৎ হলো না বিশেষত যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প একথা বলেছিলেন?

ট্রাম্প প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদির তার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার সিদ্ধান্তকে ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. মুক্তাদার খান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি আবহে মোদি যদি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তার নির্বাচনি প্রচারকে সমর্থন করতেন বা তাদের এই সাক্ষাৎকে ট্রাম্পের সমর্থন হিসেবে দেখা হয়, তাহলে তা হলে তা ‘নির্বুদ্ধিতা’ হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্বস্তি রাওয়ের মতে, যদি দেখা করার হতো তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিস দু’জনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতে হতো। যেকোনো একজনের সঙ্গে দেখা করাটা কূটনৈতিক দিক থেকে ‘সঠিক হতো না’।

কেন সাক্ষাৎ হলো না?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রবীন্দর সচদেবও মনে করেন, ভারত বা বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশ ভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো এক পক্ষকে সমর্থন করতে পারে না।

সচদেব ব্যাখ্যা করেছেন নরেন্দ্র মোদি যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতেও চাইতেন, তাহলেও তা সম্ভব হতো না। তিনি শুধুমাত্র ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতেন না, কমালা হ্যারিসের সঙ্গেও দেখা করতেন। দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক নিশ্চিত করা হয়তো সম্ভব হয়নি। হয়তো সেই কারণেই ট্রাম্প এবং মোদির সাক্ষাৎ হয়নি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন সাক্ষাতের কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন ট্রাম্প?

সচদেব বলছেন, ‘এমনও হতে পারে যে ভারতীয় কূটনীতিকরা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিস দুজনের সঙ্গেই বৈঠকের জন্য ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন। সম্ভবত সে কারণেই হয়তো ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তিনি মোদির সঙ্গে দেখা করবেন। যদিও সেই সাক্ষাৎ সম্ভব হয়নি।’

মুক্তাদার খান অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে একবারই বলেছিলেন যে তিনি মোদির সঙ্গে দেখা করবেন, যদিও এই বৈঠক নির্ধারিত ছিল না।

তবে এ সাক্ষাৎ বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়কে প্রধানমন্ত্রী মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘উপেক্ষা’ করেছেন বা তার থেকে নিজেকে ‘দূরে সরিয়ে রেখেছেন’, এমন বলাটা সঠিক হবে না। বরং বিষয়টা অনেকটা এমন যে দুই নেতার দেখা হওয়ার জন্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বর্তমান আবহে ঠিক ছিল না।

আগামী নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে আবারো মাঠে নামছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্রেটিক পার্টির তরফে প্রার্থী হলেন কমালা হ্যারিস।

মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের প্রচার এখন তুঙ্গে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা বেশ কঠিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনি লড়াই থেকে কিছুদিন আগে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুই মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে।

মুক্তাদার খান বলছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে ঠিক হয়ে যাবে কে এই নির্বাচন জিতবেন। এই পরিস্থিতিতে মোদি যদি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন এবং কোনো কারণে তিনি কমলা হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করতে না পারেন, তাহলে তা মোদির জন্য ভালো হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, কমালা হ্যারিস হয়তো নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। আর কমালা হ্যারিস দেখা করতে অস্বীকার করায় মোদির টিম হয়তো ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে মার্কিন সফরে এসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বলেছিলেন, ‘আবকি বার ট্রাম্প সরকার’। যদিও তা হয়নি। পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাট সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককে সঠিক দিশায় আনতে হিমশিম খেতে হয়েছিল ভারতকে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরাও মনে করেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপদেষ্টারা হয়তো তাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে মার্কিন নির্বাচনের আবহে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কোনও একজন প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করা ঠিক হবে না।

ভারতের কূটনীতিতে পরিবর্তন

গত কয়েক বছরে ভারতের কূটনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এই বৈঠককে বিশেষ সংকেত বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সচদেব মনে করেন, ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তা হলো এই সংকটের একটাই সমাধান – যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

অধ্যাপক স্বস্তি রাও বলছেন, ভারতকে রাশিয়ার ঐতিহ্যগত বন্ধু হিসাবে দেখা হতে পারে তবে ভারতও কিন্তু তার নিজের স্বার্থ বোঝে এবং ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে নিজের স্বার্থ দেখে।’

‘এই কারণেই জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে দ্বিধা করেননি মোদি। তিনি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন যে ভারত চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক।’

বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন যে ভারতের কিছু নিজস্ব চাহিদা রয়েছে যা পূরণ করে পশ্চিমা দেশগুলো। ভারত তার প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল।

এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও কোনও একপক্ষের পাশে কিন্তু তারা দাঁড়াবে না।

বিশ্লেষকরা এও মনে করেন যে বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক ও কৌশলগত’ প্রয়োজন।

অধ্যাপক মুক্তাদার খান বলছেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক মজবুতের পেছনে রয়েছে চীনের উত্থান। যতক্ষণ চীনের আগ্রাসনের নীতি বজায় থাকবে, ততক্ষণ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে রাখাটা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এ প্রসঙ্গে অন্য একটা উল্লেখযোগ্য দিকও তুলে ধরেছেন মুক্তাদার খান। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন শিল্প ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে চীন। তারা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকিও দিচ্ছে। যতক্ষণ অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ ভারতও কিন্তু তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক রাও মনে করেন, রাশিয়া যদি চীনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়ে, তাহলে ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে মজবুত করাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম