Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধ কতদূর গড়াবে?

Icon

সজীব হোসেন

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম

লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধ কতদূর গড়াবে?

ইসরাইলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অনেক এলাকা। ছবি: রয়টার্স

গাজার পর এবার লেবাননে স্বরূপ উন্মোচন করল ইসরাইল। বর্বর আর নৃশংস হামলায় একের পর এক প্রাণনাশের নজির গড়ছে ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’ খ্যাত এই দেশ। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বৈরুতে। 

জাতিসংঘ মহাসচিব বারংবার বলছেন, যেন লেবানন আরেকটি ‘গাজা’ হয়ে না ওঠে। তবে তার কথাই যেন সত্যি হলো। গাজায় এ পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে ইসরাইল।  লেবাননেও একই কায়দায় নিরীহ মানুষ হত্যা করা করছে দেশটি। 

কত মানুষ মরবে?

গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ওয়াকি-টকি ও পেজার বিস্ফোরণের মাধ্যমে লেবাননে ‘সুকৌশলে’ মানুষ হত্যা করেছে ইসরাইল। এরপরই কৌশল বাদ দিয়ে সরাসরি মাঠে নেমেছে মানুষখেকো এ হায়েনার দল। গত ২০ অক্টোরব থেকে দেশটিতে পুরোদমে হামলা শুরু করে ইসরাইল। মাত্র এক সপ্তাহের কম ব্যবধানে ৬২০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বোমা, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। 

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার ইসরাইলকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে— হামলা থামবে না, চলবে। 

এদিকে দেশটিতে স্থল অভিযান করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। ইসরাইলের একটি সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বলেছে, লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে মহড়া চালাচ্ছেন সেনারা।

অর্থাৎ লেবাননে মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। আর সহজেই বা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এ যুদ্ধ থামার ইঙ্গিত নেই। 

হিজবুল্লাহ কি পারবে?

ইসরাইলের হামলায় লেবাননে শত মানুষ মরার খবর পাওয়া গেলেও হিজবুল্লাহর হামলায় এ পর্যন্ত ইসরাইলিদের মৃত্যুর কোনো খবর তেমনভাবে পাওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে ইসরাইলে হিজবুল্লাহর হামলার খবর পাওয়া গেলেও বড় আকারের হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। 

মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদন বলছে, ইসরাইলের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য হিজবুল্লাহর কাছে বর্তমানে অনেক আধুনিক অস্ত্র রয়েছে। 

ওই প্রতিবেদন বলছে, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২০ হাজার সক্রিয় ও ২০ হাজার রিজার্ভ সেনা। এছাড়া ইরানি ফাতেহ-১১০ এবং স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র এবং টি-৫৫, টি-৭২ ট্যাংক এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রও রয়েছে। 

তবে এসব অস্ত্র ইসরাইলকে মোকাবিলায় কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলে দেবে।

নাগরিক সরিয়ে নেওয়া কিসের ইঙ্গিত?

লেবানন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পর্তুগালসহ অনেক দেশ। এ ছাড়াও দেশটিতে যেতে নিজ দেশের নাগরিকদের বারণ করেছে চীন। 

এদিকে তুরস্ক, ইতালি, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ লেবাননে নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করেছে।  

এই সতর্কতা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? মূলত বিশ্ববাসী ধরেই নিয়েছে লেবাননে ইসরাইলের এ হামলায় বেশ দির্ঘায়িত হবে। 

যুদ্ধের প্রভাব কতটুকু?

ইসরাইলের নির্মম হামলার প্রভাব পড়েছে লেবাননবাসীর জীবনেও। অনেক শিশুর স্কুল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। মানুষের বসতবাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বাপের ভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। 

দেশটিতে ইসরাইলের হামলার ফলে এ পর্যন্ত আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। আল-জাজিরা বলছে, লেবাননজুড়ে ইসরাইলের ব্যাপক বোমা হামলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অথচ গত এক বছরে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত হওয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ ১০ হাজার।

লেবাননের পাশে আছে কারা?

গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা চলছে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে। তবে এ পর্যন্ত লেবানের হিজবুল্লাহ ছাড়া, অন্য কেউ-ই হামাসের পাশে সরাসরি অবস্থান নেয়নি। মুখে ফাঁকা বুলি আওড়ানো, জাতিংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভোটদান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়া মূলত কোনো দেশই হামাসের জন্য তেমন কিছু করতে পারেনি। 

গাজায় ৪১ হাজার মানুষ মারার দায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে এতে এ পর্যন্ত ইসরাইলের কিঞ্চিত ক্ষতিও পরিলক্ষিত হয়নি। লেবাননের ক্ষেত্রেও হয়তো এর বেশি কিছু হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম