১ লাখ ৮৫ হাজার রুপি খরচ করে ভিক্ষা করতে যান পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানে ভিক্ষাবৃত্তি এখন একটি পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবসা হয়ে উঠছে। কারণ পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা ইরান থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছেন।
পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা দল বেঁধে মধ্যপ্রাচ্যে প্লেনে চড়ছেন, বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করছেন। এ ঘটনা নতুন শোনালেও এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। সেখানে তারা হজ ভিসার সুবিধা কাজে লাগিয়ে থাকেন। কারণ এ ভিসার জন্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য, কর সংক্রান্ত কাগজপত্র, পেশাগত আয় এবং সম্পত্তির বিবরণীর মতো জটিল নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
গত মাসে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) মুলতান বিমানবন্দরে সৌদি আরবগামী একটি ফ্লাইট থেকে ১৬ জন ভিক্ষুককে নামিয়ে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পরে একই বিমানবন্দরের আরও একটি ফ্লাইট থেকে ৮ জনকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা সবাই দক্ষিণ পাঞ্জাব জেলার বাসিন্দা। জেলাটি পাকিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকের দিক থেকে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে।
নামিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তারা ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য এজেন্টদের ১ লাখ ৮৫ হাজার রুপি (প্রায় ৬৬০ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন। কিছু ভিক্ষুক তাদের সহায়তাকারীদের সঙ্গে চুক্তি করেছে এমন চুক্তি অনুযায়ী, তারা ভ্রমণ খরচ এবং ভিসা নথির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ভিক্ষা থেকে আয়ের ৫০ শতাংশ এজেন্টদের পরিশোধ করবে।
সৌদি আরবে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এসব ভিক্ষুক হজের নামে সৌদি আরবে প্রবেশ করছে।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জানায়, এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ না করা হলে পাকিস্তানি ওমরাহ ও হজযাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি ‘ওমরাহ আইন’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে ওমরাহ যাত্রার ক্ষেত্রে ভ্রমণ সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এবং তাদের আইনি পর্যবেক্ষণের অধীনে আনা হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয় পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করেছে, যেন ভিক্ষুকদের হজের আড়ালে সৌদি আরবে যাওয়া বন্ধের উপায় খুঁজে বের করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরের ডন পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের লাখ লাখ মানুষ তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে। অনেকেই জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করেছে।
ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলোর বাইরে কিছু ভিক্ষুক দৈনিক মজুরি হিসেবে ভিক্ষা করেন এবং তারা দিনের শেষে সংগ্রহ করা পুরো টাকা বসদের হাতে জমা দেন।
১৯৫৮ সালের ভেগ্রেন্সি অর্ডিন্যান্স (ভবুঘুরে ও ভিক্ষুকদের নিয়ে যে আইন) অনুযায়ী, পাকিস্তানে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। এই আইনের অধীনে ভিক্ষুক বা ভিক্ষা করা শিশুদের অভিভাবকদের তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে মনে হচ্ছে, দেশটির কেউই এই আইনকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।