বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে ডেনমার্ক-জার্মানি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের জন্য বিমানের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব রেলপথকে উৎসাহ দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ সেই লক্ষ্যে ডেনমার্ক ও জার্মানির মধ্যে দূরত্ব কমাতে একটি সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের কাজ চলছে৷এটাই বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, যার অংশগুলো আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছে৷
এই প্রকল্পটি সব রেকর্ড ভাঙতে চলেছে৷ ডেনমার্কের রাজা স্বয়ং প্রথম অংশটি উৎসর্গ করেছেন৷ফলে প্রকল্পটির গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে৷
ডেনমার্কের পরিবহণ মন্ত্রী টোমাস ডানিয়েলসেনের মতে, এটা গুরুত্বপূর্ণ এক প্রকল্প, কারণ আমরা ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাচ্ছি৷
ফেমার্ন এএস সংস্থার কর্ণধার হেনরিক ভিনসেন্টসেন মনে করেন, ২০২৯ সালে জার্মানির সঙ্গে সুড়ঙ্গ সংযোগ খোলার চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক৷
ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এই প্রকল্পে চমকের অভাব নেই৷ সুড়ঙ্গ তৈরির লক্ষ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় নির্মাণের সাইট সৃষ্টি করতে হয়েছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ড্রেজারও সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তবে ইউরোপের এই মেগা-প্রকল্পে চ্যালেঞ্জের মাত্রাও কম নয়৷ যেমন নির্মাণের সময় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো কংক্রিট ঢালার কাজ৷ ৩০ ঘণ্টা ধরে অবিরাম কংক্রিট ঢালা হবে৷ অর্থাৎ একটি অংশের জন্যেই বিশাল পরিমাণ কংক্রিটের প্রয়োজন৷
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে প্রকল্পের ম্যানেজার গেয়ারহার্ড কর্ডেস বলেন, প্রতিটি উপাদান একবারেই ঢালা গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে প্রথমে ফ্লোর স্ল্যাব, তারপর প্রাচীর, তারপর সিলিং তৈরি করা হবে৷ আমরা এক ঢালাইয়ের মাধ্যমেই গোটা অংশে কংক্রিট প্রস্তুত করি৷ কারণ ফাটল এড়াতে তাপমাত্রার চাপ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য৷ ওয়াটারলাইট কনস্ট্রাকশনে সেটা অতি গুরুত্বপূর্ণ৷
আগে থেকে প্রস্তুত করা প্রথম অংশগুলি ভালোভাবেই কাজে লাগানো গেছে৷ প্রত্যেকটি ২১৭ মিটার দীর্ঘ ও ৪২ মিটার চওড়া৷
হেনরিক ভিনসেন্টসেন বলেন, এই লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে যে কাজ করেছি, এটা তার বড় স্বীকৃতি৷ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করে আমাদের ডিজাইনার, নির্মাণ ব্যবস্থাপনা বিভাগে আমরা এবং আমাদের আশেপাশের কাঠামো – এটা সবারই প্রাপ্তি বটে৷
পরিবেশ বাঁচাতে রেলসুড়ঙ্গ
মোট ৮৯টি আগে থেকে তৈরি অংশ জুড়ে সুড়ঙ্গটি তৈরি করা হচ্ছে৷ দুটি টিউবে ট্রেন ও দুটিতে গাড়ি চলবে৷ বিশাল অংশগুলো সমুদ্রে ডুবিয়ে একটির সঙ্গে অন্যটি জোড়া দেওয়া হবে৷ তারপরে ভেতরেও অনেক কাজ করতে হবে৷
গেয়ারহার্ড কর্ডেস বলেন, আমরা জানি, সমুদ্রের তলদেশে খুঁড়তে শুরু করলে আমরা কিছু রিফ ধ্বংস করবো৷ কিন্তু সেটা খুবই নগন্য, মোট রিফ এলাকার মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ৷ তবে ধ্বংসকাণ্ডের তুলনায় বাস্তবে বিভিন্ন জায়গায় আরো রিফ পুনর্গঠন করা হবে৷
সেই সুড়ঙ্গ ডেনমার্ককে জার্মানির উত্তরাংশের সঙ্গে যুক্ত করবে৷ ফলে রেলযাত্রী ও গাড়ি চালকদের আজকের তুলনায় ১৬০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হবে৷ এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রকল্পের অংশ, যার আওতায় ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে রেল যাত্রা আরো দ্রুত করে তুলে বিমানযাত্রার প্রয়োজন দূর করার লক্ষ্য স্থির করা হচ্ছে৷ সেই প্রকল্পের আওতায় ব্রেনার বেস টানেলও নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অস্ট্রিয়া ও ইটালির মধ্যে সংযোগ ঘটবে৷ ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেল টানেল হতে চলেছে৷
ডেনমার্কের প্রকল্পের ব্যয় কি সত্যি উঠে আসবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ নির্মাণের আনুমানিক ব্যয় আপাতত ৭০০ কোটি ইউরো ধরা হচ্ছে৷
প্রকল্পের ম্যানেজার মাটিয়াস লাউবেনস্টাইন বলেন, আমাদের অনুমানের ভিত্তি পরিবহণ সংক্রান্ত এক পূর্বাভাস, যা অনুযায়ী দিনে প্রায় ১১১টি ট্রেন চলবে৷ সেটাই আমাদের আর্থিক বিশ্লেষণের ভিত্তি৷ তাছাড়া ২০৩০ সাল থেকে প্রায় ১২,০০০ গাড়ি ফেমার্নবেল্ট টানেল ব্যবহার করবে বলে আমরা ধরে নিচ্ছি৷
গাড়িপ্রতি ৭৩ ইউরো টোল ট্যাক্স নেওয়া হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ট্রেনের জন্য ধার্য মাসুল এখনো অজানা রয়ে গেছে৷ কিন্তু নির্মাণের ব্যয় যে কমপক্ষে ২০ বছরে উঠে আসবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷
এই বিশাল প্রকল্পে নিরাপত্তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ গেয়ারহার্ড কর্ডেস বলেন, সুড়ঙ্গের মাঝে পানি ঢুকে গেলে আমাদের সত্যি বড় সমস্যা হবে৷ প্রাচীরগুলি সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন ও গাড়ির দুর্ঘটনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে৷ ফলে নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ সেটা সত্যি কোনো সমস্যা নয়৷
২০২৯ সালে সুড়ঙ্গটি প্রস্তুত হওয়ার কথা৷ ডেনমার্কই পুরোপুরি এর ব্যয়ভার বহন করছে, কারণ এই প্রকল্প জার্মানদের তুলনায় তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷