ট্রাম্পের ওপর আক্রমণগুলো ‘নাটক’ ছিল?
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে রাজনৈতিক বিভক্তি ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে। একদিকে তার কট্টর সমর্থক, অন্যদিকে তাকে ঘৃণা করা মানুষ। তবে তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল হলো- ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হামলাগুলো নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হওয়া হত্যার প্রচেষ্টাগুলো ‘মঞ্চস্থ’ হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন মার্কিন দুই নারী। এই দুই নারী হলেন- ‘ওয়াইল্ড মাদার’ খ্যাত ডেসিরে। যিনি একজন ট্রাম্প সমর্থক এবং কিউঅ্যানন তত্ত্বের অনুসারী।
অপরজন হলেন ক্যামিল, যিনি মূলত একজন ডেমোক্রেট সমর্থক। মার্কিন সামাজিক এবং জাতিগত সমতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান।
ডেসিরে মূলত কলোরাডোর পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী এক নারী, যিনি সামাজিক মাধ্যমে ‘ওয়াইল্ড মাদার’ নামে এক সংগঠনের নেত্রী হিসেবে পরিচিত। তার অনুসারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। তিনি প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং মাতৃত্বের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন এবং ট্রাম্পের জয় কামনা করেন।
অন্যদিকে, ক্যামিল থাকেন প্রায় ৭০ মাইল উত্তরে ডেনভারের উপকণ্ঠে। যিনি ডেমোক্রেট সমর্থক এবং গত ১৫ বছর ধরে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
এই দুই নারীর রাজনৈতিক অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও, তারা উভয়েই বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্পের ওপর হামলাগুলো আসলে সাজানো।
হামলার প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের জুলাই মাসে পেনসিলভেনিয়ায় একটি নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। সিক্রেট সার্ভিস ট্রাম্পকে বাঁচাতে সক্ষম হন এবং থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস নামের হামলাকারীকে ঘটনাস্থলে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয় এবং এই অস্পষ্টতাই ক্যামিল এবং ওয়াইল্ড মাদারের মতো মানুষদের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ক্যামিল এ ঘটনার পর থেকেই সন্দেহ করতে শুরু করেন যে, হামলাটি হয়তো সাজানো ছিল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের ছবিতে তার রক্তমাখা মুখ এবং মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের ভঙ্গি আমাকে এটা ভাবতে বাধ্য করেছে যে, এটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে’।
অন্যদিকে, ওয়াইল্ড মাদার খ্যাত ডেসিরে বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের দলের মধ্যেই কেউ এ হামলা সাজিয়েছে। যাতে ‘ডিপ স্টেট’ বা গোপন সংস্থাকে দোষারোপ করা যায়। ডিপ স্টেটের ধারণাটি প্রায়ই ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর অংশ। যেখানে বলা হয় যে, কিছু গোপন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে, যেখানে অগণিত পোস্টে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারিত হয়েছে।
ক্যামিল এবং ওয়াইল্ড মাদার- দুজনেই বলেছেন যে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পোস্টগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। ক্যামিল মূলত প্রো-ডেমোক্র্যাট অ্যাকাউন্টগুলো অনুসরণ করতেন, যা তাকে ট্রাম্পবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট করেছিল।
অন্যদিকে, ওয়াইল্ড মাদার কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একজন অনুরাগী, যা বিশ্বাস করায় যে, ট্রাম্প একটি গোপন যুদ্ধে লিপ্ত। যেখানে তিনি শয়তানপূজারী অভিজাতদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রভাব
ক্যামিল এবং ওয়াইল্ড মাদারের এমন মতামত শুধু তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে পরিবর্তন করেনি, বরং তাদের পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনেও ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ক্যামিলের পরিবারে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। আর ওয়াইল্ড মাদারের মতে, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কারণে তার বৈবাহিক জীবনেরও অবসান ঘটেছে।
এ বিষয়ে ওয়াইল্ড মাদার বলেন, ‘আমার জীবনে যেন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এটি সম্ভবত আমার সংসার ভাঙার একটি বড় কারণ ছিল’।
গোটা সমাজের ওপর প্রভাব
এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধু মার্কিনিদের ব্যক্তিগত জীবনে নয়, বরং সমগ্র সমাজেও প্রভাব ফেলছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদরা এমন একটি পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছেন, যেখানে তারা ক্রমাগত হুমকি এবং ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মার্কিন সমাজের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে নষ্ট করছে এবং আইনগত প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্দেহ বাড়িয়ে তুলছে।
এ বিষয়ে ক্যামিল বলেন, ‘আমি এখন নিজেও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভাষা ব্যবহার করছি। যদিও আমি এ ধরনের বিষয়গুলোতে কখনও বিশ্বাস করতাম না’।
এতে বোঝা যায় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা তথ্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো কিভাবে মানুষের মনোভাব এবং বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সেই সঙ্গে এর ফলে সমাজে বিভাজন আরও গভীর হয়ে উঠছে।
(মূল লেখক- মারিয়ানা স্প্রিং, ডিজইনফরমেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিনিধি, বিবিসি)।