Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

কেনিয়ায় বিমানবন্দর হাতছাড়া আদানির! নেপথ্যে কী?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পিএম

কেনিয়ায় বিমানবন্দর হাতছাড়া আদানির! নেপথ্যে কী?

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জ়োমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চুক্তিভিত্তিক অধিগ্রহণের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির কোম্পানি আদানি গ্রুপ। আর তাতেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে স্থানীয় বিমানবন্দরের কর্মীদের মধ্যে। আদানি গ্রুপ বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত সোমবার ধর্মঘট করে দেশটির বিমানবন্দরের কর্মচারী ইউনিয়ন ‘কেনিয়া অ্যাভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। 

কেনিয়া সরকারের সঙ্গে ওই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে জোমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংস্কার এবং একটি অতিরিক্ত রানওয়ে তৈরির কথা ছিল আদানি গ্রুপের। পরিবর্তে আগামী ৩০ বছর এই বিমানবন্দরের মালিকানা থাকত আদানিদের হাতে।

শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যাপক বিক্ষোভে শেষমেশ সে দেশের আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। দেশটির স্থানীয় একটি আদালত কেনিয়া সরকার ও আদানি গ্রুপের এই চুক্তিটির বাস্তবায়নে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছে। 

বিমানবন্দর সম্প্রসারণের দায়িত্ব আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিং লিমিটেডের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় স্থগিতাদেশের ফলে কেনিয়ায় আদানি গ্রুপ পা রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট দোলাচল তৈরি হয়েছে। 

এই বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ঘটনা ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন জোগাতে পারে। 

মঙ্গলবার তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের আন্দোলন ভারত এবং ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে রোষে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

কেনিয়ার এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের দাবি, আদানি এয়ারপোর্টস হোল্ডিংসের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে কেনিয়ার বাইরে থেকে কর্মীদের নিয়ে আসা হবে এবং এর ফলে কেনিয়ার অনেকের চাকরি চলে যাবে। তাই তারা সাতদিনের নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে নেমেছে। 

ইউনিয়নের দাবি, সরকারকে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। তারা মনে করে, সরকার জেকেআইএ বিমানবন্দরকে বেআইনিভাবে বেচে দিতে চাইছে। 

তবে সে দেশের সরকার বার বার বলেছে যে, বিমানবন্দরটি বিক্রি করা হচ্ছে না। দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরের সংস্কারের চুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। 

কেনিয়া সরকারের দাবি, এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ। বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে তাও চূড়ান্ত নয়। 

এর আগে আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড প্রায় ১৫ হাজার ৫২৬ কোটি টাকার বিনিময়ে নাইরোবির জ়োমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে সম্প্রসারণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছিল কেনিয়া সরকারকে। 

কিন্তু বিমানবন্দরটি বিক্রি হচ্ছে না, কেনিয়া সরকারের এই আশ্বাসেও কাজ হচ্ছে না কেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের আদানি-রোষের নেপথ্যে ঠিক কী কারণ? শুধুই কি কর্মী অসন্তোষ, না কি এর নেপথ্যে অন্য কোনো ইস্যু কাজ করছে! 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, কেনিয়ার এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আদানির নাইরোবি বিমানবন্দর অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, অধিক মুনাফা ভোগ করতে আদানি গ্রুপকে বেপরোয়া সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। দেশটির বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান এককভাবে আদানি দখল নিচ্ছে। 

এমন আবহে কেনিয়া ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি ও আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানির বিতর্কিত বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরে সরকারকে সতর্ক করেছে কংগ্রেস। 

এক বিবৃতিতে দলটির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, এটি ভারতের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ আদানির সঙ্গে অ-জৈবিক প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদির) বন্ধুত্ব এখন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। তাই এই প্রতিবাদ সহজেই ভারত এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে রূপান্তরিত হতে পারে। 

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে আদানি প্রকল্পগুলো নিয়ে একই ধরনের বিতর্ক আমাদের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভারতের জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝাড়খন্ডে আদানির কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিণত হয়েছিল। 

কংগ্রেসের এই নেতা আরও বলেন, শ্রীলংকার মান্নার জেলায় আদানি গ্রুপের পুনর্নবায়ণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোও বিতর্ক উসকে দিয়েছিল। এ কারণে ২০২২ সালে শ্রীলংকা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভও শুরু হয়েছিল’। 

জয়রাম রমেশ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে, ভারতের সফট পাওয়ার তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম শক্তি। আজ আদানি গ্রুপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগসাজশ এই শক্তিকে কমাতে এবং বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের জন্য নজিরবিহীন পরিবর্তনে অবদান রেখেছে। অ-জৈবিক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বন্ধুত্বের কারণে দেশকে যে-সব ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার মধ্যে এটি একটি। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম