চীনে নতুন একটি ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওয়েটল্যান্ড ভাইরাস (ডব্লিউইএলভি) নামে পরিচিত ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি মস্তিষ্ক আক্রান্ত করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি স্নায়ুবিক রোগের কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
রোববার এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
করোনা মহামারিতে স্তবির হয়ে পড়ে বিশ্ব। ২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে বিশ্বজুড়ে কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় তিন বছর পর ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর সম্প্রতি এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স নামে আরও একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমপক্স মোকাবিলায় দেশে দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
এবার চীনে এমন আরেকটি ভাইরাস পাওয়া গেছে, যা এক ধরনের পোকার কামড়ে মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।
দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ভাইরাসটি প্রথম দেখা যায়, চীনের জিনঝু শহরের ৬১ বছর বয়সি এক রোগীর শরীরে ২০১৯ সালের জুন মাসে।
মঙ্গোলিয়ার জলা এলাকায় ‘টিক’ বা ‘এঁটেল’ পোকার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। রোগীর জ্বর আসে, মাথা ব্যথা হয়, বমি হয় এবং এন্টিবায়োটিক দিয়েও এসব উপসর্গের উপশম হয়নি।
টিক বা এঁটেল পোকার মাধ্যমে বেশ কিছু রোগ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। এর মাঝে ডব্লিউইএলভি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য একটি রোগ হলো ক্রিমিয়ান-কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার।
জিনঝু শহরে প্রথম ওয়েটল্যান্ড ভাইরাসের দেখা পাওয়ার পর গবেষকরা উত্তর চীনে এ নিয়ে বিশদ তদন্ত করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪ হাজার ৬০০ এঁটেল পোকা সংগ্রহ করেন তারা। এসব পোকার মাঝে প্রায় ২ শতাংশের মধ্যে ডব্লিউইএলভি ভাইরাসের জীনগত উপাদান পাওয়া যায়। এ ভাইরাসটির আরএনএ আরও কিছু প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায়, যেমন ভেড়া, ঘোড়া, শূকর এবং কিছু ইঁদুরজাতীয় প্রাণী।
ওই গবেষকরা উত্তর চীনের বাসিন্দাদের থেকে রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, প্রতি ৬৪০ জনের মাঝে ১২ জনের শরীরে ওই ভাইরাসের এন্টিবডি আছে। এছাড়া এঁটেল পোকার কামড়ে আক্রান্ত এমন ২০ জন রোগী পাওয়া যায়, যাদের শরীরে ভাইরাসটি আছে। এসব রোগীর জ্বর, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার উপসর্গ ছিল। এমনকি রক্তে অতিরিক্ত শ্বেত রক্তকণিকার উপস্থিতি থাকার কারণে এদের একজন রোগী কোমায় চলে যান।
পরীক্ষাগারে গবেষণায় দেখা যায়, ভাইরাসটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে সক্ষম এবং এতে মৃত্যুও হতে পারে। তবে ঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসার পর সব রোগীই সেরে ওঠেন।