যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে অসহায় এক মায়ের হতাশা
‘আমাদের আর ভবিষ্যৎ নেই’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পিএম
সুদান-চাদ সীমান্তের কাছে একটি শহর আদ্রে। কর্দমাক্ত নোংরা কাঁচা রাস্তা। ধুলোমাখা পথেই চিন্তায় বিভোর হয়ে বসে আছেন বুথাইনা (৩৮)। সঙ্গে আরও কিছু নারী। প্রত্যেকের কোলেই রয়েছে তাদের পরম আদরের সন্তানরা। এটাই হয়তো তাদের একমাত্র সম্বল!
কেননা কানাকড়ি তো দূরের কথা কোনোমতে জীবন বাজি রেখে পালাচ্ছেন তারা। দানা-পানির অভাব আর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শুধু ছুটে চলছেন অজানা গন্তব্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই এক নারীকে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করায় হতাশায় তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ? কিসের ভবিষ্যৎ? আমাদের আর ভবিষ্যৎ নেই। আমার সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ সেনা-আধাসেনা রণক্ষেত্র সুদানে এমন মায়েদের আহাজারি এখন ঘরে ঘরে। বিবিসি।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছিল সুদান গৃহযুদ্ধ। সেনা-আধাসেনাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তুমুল লড়াই শুরু হয় দেশজুড়ে। প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয় লাখ লাখ বেসামরিক লোক। শুরু হয় চরম দুর্ভিক্ষ। খাবার পানির অভাবে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে মানুষের জীবন। নারীদের ওপর শুরু হয় অবর্ণনীয় জুলুম-অত্যাচার। একাধিকবার আধাসামরিক বাহিনী (আরএসএফের) বিরুদ্ধে ওঠে ধর্ষণের অভিযোগ। বুথাইনার মতো এমন হাজারও নারী শুধু সন্তানের কথা ভেবে ঘর থেকে পালিয়ে আসেন।
বুথাইনা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। আমরা শুধু আমাদের জীবনের জন্য দৌড়িয়েছি। আমরা আমাদের ঘর ছেড়ে পালাতে চাইনি, আমার বাচ্চারা স্কুলে পড়াশোনা করছিল। বাড়িতে আমাদের জীবন ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেছে।’
শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবন নিয়েও কথা বলেছেন অনেকে। একটু বৃষ্টি হলেও সেখানে বন্যা হয়ে যায়। তাঁবুর ভেতর পানি ঢুকে গেলে নানা রকম রোগের উপদ্রব হয়। এছাড়াও ঠিকমতো ত্রাণও পৌঁছাতে পারে না সেসব অঞ্চলগুলোতে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে সেনা ও আধাসেনাবাহিনী সেসব ত্রাণ চুরি করে নেয়। ফলে বহির্বিশ্ব থেকে পাঠানো সাহায্য পায় অসহায় মানুষেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেছেন, তিনি রাজধানী খার্তুমের কাছে ওমদুরমান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার দুই বছরের ছেলের সাথে বন্দি হয়েছিলেন। আধাসামরিক বাহিনীর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তারা আমার ছেলেকে হলওয়ের নিচের একটি ঘরে নিয়ে যেত এবং তারা আমাকে ধর্ষণ করার সময় আমি তার কান্না শুনতে পেতাম। ঘটনাটি এত ঘন ঘন ঘটেছে যে আমি তার কান্না দেখে আর সহ্য করতে পারিনি। অবশেষে পালিয়ে এসেছি।’
সুদানের নারীদের এমন করুণ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বিবিসি জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ। তিনি তার নির্বাহীদের সঙ্গে আদ্রে এবং পোর্ট সুদান সফর করছিলেন। সে সময় তারা সুদানের ডি-ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে আদ্রে ক্রসিং উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানাতে গিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য হলো সুদানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনা।
কেননা তার মতে, বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতের মাঝে সুদানের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সমস্যা রয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে অনেক বিভিন্ন সংকট রয়েছে, তবে সুদানের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। আপনি এখানে আসেন এবং আপনি এই মা এবং তাদের বাচ্চাদের সাথে দেখা করেন এবং আপনি বুঝতে পারেন যে ভুক্তভোগীরা সংখ্যায় ছোট নয়। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ না নেয় তবে মানুষ মারা যাবে।’