কঙ্গনা রানাউত। ফাইল ছবি
হিমাচল প্রদেশের মান্ডি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২০২৪ সালের ভোটে জয়ী হন কঙ্গনা রানাউত। এরপর থেকে তার একের পর এক রাজনৈতিক মন্তব্য বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছে। এখন কঙ্গনার মন্তব্য সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
একদিকে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষক আন্দোলন কঙ্গনা কখনো সমর্থন করেননি। কৃষক আন্দোলন নিয়ে বারবার মন্তব্য করে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। অন্যদিকে তার নতুন সিনেমা ‘ইমার্জেন্সি’ সৃষ্টি করেছে নতুন বিতর্ক। কঙ্গনার বিরুদ্ধে গেছে শিখসমাজও। এ সিনেমা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। কঙ্গনা ‘ইমারজেন্সিতে’ ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই সিনেমার জন্য তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে।
শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে বলতে হয়েছে, কঙ্গনার মন্তব্য তার ব্যক্তিগত। সেই সব মন্তব্য বিজেপির বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। দল বিবৃতি দিয়ে তাকে জানিয়েছে, আর যেন কোনো বিষয়ে তিনি মুখ না খোলেন। সাম্প্রতিককালে বিজেপিতে এমন আর কারও বেলায় ঘটেনি।
কৃষক আন্দোলন নিয়ে বেহিসেবি মন্তব্য করায় দল তাকে মুখ খুলতে নিষেধ করেছে। কৃষক আন্দোলন নিয়েই আবার মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন কঙ্গনা। এক জনপ্রিয় হিন্দি দৈনিকে সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপিং তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন।
পোস্টে তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলনও বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারত; কিন্তু তা হয়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিচক্ষণ নেতৃত্বের জন্য।
ওই পোস্টেই তিনি লেখেন, কৃষক আন্দোলন চলাকালে ধর্ষণের বহু ঘটনা ঘটেছে। ঝুলন্ত অবস্থায় বহু দেহ পাওয়া গেছে। তিনি বলেছিলেন, কৃষক আন্দোলনের পেছনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মদদ ছিল। ওটা ছিল তাদের চক্রান্ত।
এর আগে কখনো বলেছেন, আন্দোলনকারী কৃষকেরা ‘সন্ত্রাসবাদী’। কখনো বলেছেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা ১০০ টাকা নিয়ে ধরনামঞ্চে বসেছেন।
এ মন্তব্যের জন্য গত জুনে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে কর্তব্যরত এক মহিলা জওয়ান তাকে চড় মেরেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কুলবিন্দর কৌর নামের সেই মহিলার বিরুদ্ধে সেজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল।
এ পরিস্থিতিতে কঙ্গনার মন্তব্য বিজেপির কাছে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অবস্থা সামাল দিতে তাই বিজেপি বাধ্য হয় কঙ্গনার মন্তব্য থেকে দলকে দূরে রাখতে। তাকে হুটহাট মুখ খুলতে বারণ করে দেওয়া হয়।
মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (উদ্ধব) নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, কঙ্গনা ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাননি। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। দুঃখ প্রকাশও করা দরকার। বিজেপিও দুঃখ প্রকাশ করেনি, অথচ কঙ্গনা তাদেরই লোকসভা সদস্য। এ থেকেই বোঝা যায়, কৃষকদের জন্য বিজেপি যা কিছু করে ও বলে, তা স্রেফ কথার কথা।
রাজনীতিতে ঢোকার পর থেকে কঙ্গনার সিনেমাও তেমন সাফল্য পায়নি। এ অবস্থায় তার নতুন সিনেমা ‘ইমারজেন্সি’ সৃষ্টি করেছে নতুন বিতর্ক।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ‘ইমারজেন্সি’ রিলিজ করার কথা; কিন্তু তা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। একান্তই রিলিজ হলে আপত্তিকর অংশ বাদ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।
শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির (এসজিপিসি) প্রধান হরজিন্দর সিং ধামি কঙ্গনার বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাবি জানিয়ে বলেন, সিনেমায় শিখসমাজকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা ভুল নয়, এটা ইচ্ছাকৃত। কঙ্গনা ‘ইমারজেন্সি’তে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক।
এই সিনেমার জন্য কঙ্গনাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এক ভিডিওতে ভিকি থমাস সিং নামের এক শিখ নেতাকে বলতে শোনা গেছে, শিখ সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদী দেখালে মনে রাখবেন, যার (ইন্দিরা গান্ধী) জীবনের ঘটনা নিয়ে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে, তার পরিণতি কী হয়েছিল। শিখ যদি নিজের গলা কাটাতে পারে, তাহলে অন্যের গলাও কাটতে পারে।
ওই ভিডিওতেই কঙ্গনার উদ্দেশে অন্য একজনকে বলতে শোনা যায়, এর আগে আপনি থাপ্পড় খেয়েছিলেন। এই সিনেমা রিলিজ করলে সরদারেরা আপনাকে জুতোপেটা করবে।
ওই ভিডিও কঙ্গনা নিজেও দেখেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিওটি দিয়ে তিনি ট্যাগ করেছেন মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের পুলিশকে। সঙ্গে লিখেছেন- ‘দয়া করে ভিডিওটি দেখুন।’
কঙ্গনা নিজেকে বিপদে ফেলেছেন, দলকেও ফেলেছেন বিপাকে।