Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

কারাগারে থেকেও যেভাবে রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রেখেছেন ইমরান খান 

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৯ পিএম

কারাগারে থেকেও যেভাবে রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রেখেছেন ইমরান খান 

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে আছেন প্রায় এক বছর। তবে কারাগারে থাকলেও দেশটির রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বজায় রেখেছেন তিনি। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো পাকিস্তানের বিরোধী রাজনীতির প্রভাবশালী শক্তি ইমরান খান। কাগজপত্রে ও আদালতে তার নাম আসছে নিয়মিত, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ইমরানের সমর্থকরা ‘অদম্য’।

জনসমক্ষে আসতে না পারালেও এই সাবেক ক্রিকেট তারকার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে আসা অল্প কিছু মানুষ বহির্বিশ্বের কাছে তার (ইমরান খানের) বার্তা পৌঁছানোর একমাত্র দূত হয়ে উঠেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন ইমরানের আইনজীবীরা ও পরিবার।

কারাগারে থাকা সত্ত্বেও যে ইমরান খান মাথা নত করেননি, সেই বার্তা পাঠাতেই আগ্রহী ইমরান খানের আইনজীবী ও তার পরিবারের সদস্যরা। ইমরানের বোন আলিমা খানম বলেন, ওর মধ্যে একটা অদম্য ব্যাপার আছে। ওর কোনো চাহিদা নেই, কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আছে শুধুমাত্র একটা উদ্দেশ্য।

যারা দেখা করতে যান, তাদের মতে, এই সাবেক ক্রিকেট তারকার দিন কাটে এক্সারসাইজ বাইকে কসরত করে, বই পড়ে এবং ভাবনা চিন্তা করে। উঠানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তার হাতে দিনে এক ঘণ্টার মতো সময় থাকে।

পরিবার কত তাড়াতাড়ি তাকে নতুন বই সরবরাহ করতে পারে তা নিয়ে অবশ্য মাঝে মাঝে মতবিরোধও দেখা যায়। কিন্তু বাস্তব বিষয় হলো, ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি এখনো কারাগারে আটক আছেন। তাদের মুক্তি পাওয়ার কোনো লক্ষণ খুব শিগগিরি দেখা যাচ্ছে না।

কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, এটি খুব একটা আশ্চর্য হওয়ার বিষয় নয়। কারাগারে এক মিনিটও সময় নষ্ট করছেন না বলে জানিয়েছেন ইমরান খান। এটি তার কাছে আরও জ্ঞান অর্জন করার একটা সুযোগ, বিবিসিকে বলছিলেন আলিমা খানম। 

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, তার জেল থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টা সহজ হয়, ইমরান তেমন কিছু একটা করবেন বলেও কোনো প্রত্যাশা ছিল না।

কুগেলম্যান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হলো পর্দার আড়ালে থাকা আসল শক্তিশালী খেলোয়াড়। তার কথায়, তারা যখন সিদ্ধান্ত নেয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বন্দি রাখার, তখন তারা এত চট করে শান্ত হয় না।

তিনি জানান, ইমরান খানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে।

গত এক দশকে ইমরান খানের জীবনের অনেক উত্থান-পতনের মূলে কিন্তু ছিল এই সেনাবাহিনী। 

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, প্রথম দিকে সামরিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই তাকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু ছবি একেবারে বদলে গিয়েছে। গত বছরে সেই সম্পর্ক এসে তলানিতে ঠেকে।

সমাবেশ বাতিলের কারণ জানালেন ইমরান খান

ইমরানের আইনজীবী ও নির্বাচনে প্রার্থী সালমান আক্রম রাজা বলেন, তা সত্ত্বেও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। তিনি বলেন, একেবারে কোণঠাসা পরিস্থিতি ছিল। অনেকেই নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারেননি। ক্রিকেট ব্যাটের প্রতীক হারিয়ে যাওয়াটা ছিল আঘাতের মতো।

যেহেতু পিটিআইয়ের সব প্রার্থীই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, তাই দলের অন্দরমহলেও তেমন আশার আলো দেখা দেখা যায়নি।

তবুও ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা অন্যদের তুলনায় বেশি আসন জিতেছেন এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জোট গঠন করতে বাধ্য করেছে। কারচুপির অভিযোগ তুলে পিটিআই আদালতের দ্বারস্থ হয়।

সমর্থকরা কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে একটা ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে কারাগারের ভিতরে থেকেও ইমরান খানের শক্তিশালী উপস্থিতির বার্তা দেয় এই নির্বাচন।

আলিমা খানম বলেন, একটা পরিবর্তন এসেছে এবং সেটা প্রকাশ পেয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। পরিবর্তন আসছে এবং তার আভাস রয়েছে বাতাসে।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, এই নির্বাচনি ফলাফলে স্থিতাবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে, ইমরান খান এবং তার সমর্থকদের জন্য পরিস্থিতি একটু হলেও বদলেছে।

নির্বাচনের ঠিক আগে দেওয়া তিনটে সাজার সবকটাই বাতিল হয়ে গিয়েছে। জাতিসংঘের একটা প্যানেল ইমরান খানকে আটক করার বিষয়কে ‘স্বেচ্ছাচার’ বলে ঘোষণা করেছে এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে পিটিআই একটি সরকারি দল। তাদের 'সংরক্ষিত আসন' পাওয়া উচিত।

কিন্তু এর কোনোটাই বাস্তবে হয়নি। ইমরান খান এখনো কারাগারেই রয়েছেন। তার নামে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংরক্ষিত আসন পিটিআইকে এখনো বরাদ্দ করা হয়নি।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা ইমরান খান ও তার দলকে জনগণের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মনে করে। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও পাকিস্তানের সরকার চলতি মাসের শুরুতেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে চায়। 

সামরিক বাহিনী কিন্তু তাদের মত পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

চলতি বছরের ৯ মে সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ শাখা একটা বিবৃতিতে জানিয়েছিল, পরিকল্পনাকারী, সেখানে যারা মদত দেয় এবং জল্লাদদের সঙ্গেও কোনো আপস করা হবে না এবং তাদের দেশের আইনকে ফাঁকি দেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হবে না।  

বিশ্লেষকদের মধ্যে অধিকাংশই মনে করেন যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে 'সম্পর্কই' শেষ পর্যন্ত কারাগার থেকে ইমরান খানকে বাঁচাতে পারে।

আমরা এমন একটা উপায় খুঁজে বের করছে চাইছি যা সবার পক্ষে আর একইসঙ্গে প্রশাসনও কাজ করতে পারে, বলেছেন ইমরান খানের আইনজীবী রাজা। 

এদিকে ইমরান খান কিন্তু কারাগারে থাকা অবস্থা থেকেই নিজের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। আলিমা খানম সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইমরান খান সেনাবাহিনীকে বলেছেন, নিরপেক্ষ থাকতে... যাতে দেশ চলতে পারে। সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের মেরুদণ্ড বলেও মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

এই বিষয়টাকে অবশ্য ‘শান্তি সমঝোতা’ হিসাবেই দেখেছেন অনেকে। কারণ এর আগে সেনাবাহিনী যখন নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ বলে দাবি করেছিল, সে সময় এই বিষয়ে উপহাস করেছিলেন মি খান। বলেছিলেন, শুধুমাত্র একটা জন্তুই নিরপেক্ষ হতে পারে।

সাম্প্রতিককালে ইমরান খান যে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন সেটাকে অনেকেই সামরিক বাহিনীর কাছে রাখা ‘শর্তগুলোর’ মধ্যে একটা বলে মনে করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইমরান খান কিছুটা নমনীয় হতে পারেন। পাকিস্তানি রাজনীতির একটা বাস্তবতা হল, যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তবে আপনাকে সেনাবাহিনীর অনুগ্রহে থাকতে হবে। অন্তত একেবারে বিপক্ষে চলে গেলে হবে না, তিনি আরও জানাচ্ছেন। 

পাকিস্তানের অচলবস্থা অবশ্য এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম