ইউক্রেনে রয়টার্সের নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিহত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম
রয়টার্সের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রায়ান ইভান্স। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি হোটেলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিহত হয়েছেন। সেসময় যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে রয়টার্সের ছয় কর্মী ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্কের স্যাফায়ার হোটেলে অবস্থান করছিলেন। সেখানে শনিবার রাতে হামলায় সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা নিহত হন। হামলায় আহত হয়ে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক হাসপাতালে আছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তবে অপর তিন সাংবাদিক নিরাপদে আছেন। সোমবার বার্ত সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে এই তথ্য।
দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ বড় শহর ক্রামাতোরস্ক। শহরটি প্রায়ই মানবিক সহায়তাকর্মী ও বিদেশি সাংবাদিকদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিহত ওই নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, ‘বিশ্বের নানা প্রান্তে সংবাদ সংগ্রহের সময় আমাদের অনেক সাংবাদিককে নিরাপদে রাখতে তিনি সহায়তা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন প্রিয় সহকর্মী ও বন্ধু।’ ইউক্রেনের কৌঁসুলিরা বলেন, হোটেলটিতে শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে একটি রুশ ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে হোটেল ও এর পাশের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনে রুশ হামলার কথা উলেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব কিছুর জন্য সন্ত্রাসী দেশটির ওপর বিশ্বের চাপ দেওয়া বন্ধ করা অবশ্যই উচিত হবে না।’ শনিবার ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার হামলায় ১৮ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। কিয়েভের দাবি, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আরও অগ্রসর হয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ইসরাইলে হামলা করায় হিজবুল্লাহর প্রশংসা করল ইরান
এদিকে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সোমবার স্থানীয় সময় সকালে রাজধানীতে হওয়া হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দিনের শুরুতে দুই দফা ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। বিমানবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়, রাশিয়ার ১১টি টিইউ-৯৫ বোমারু বিমান ইউক্রেনের আকাশ সীমায় দেখা গেছে। তারা নিশ্চিত করেছে, একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। রাজধানীর বাইরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার শব্দ শোনা গেছে।
শনিবার দেশটির স্বাধীনতা দিবস কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরেই একটি মারাত্মক হামলার আশঙ্কা করছিল ইউক্রেন। মার্কিন দূতাবাস এ বিষয়ে গত সপ্তাহে তাদের সতর্ক করেছিল। কিয়েভের সেনাপ্রশাসনের প্রধান সেরহিই পপকো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সময় ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কিয়েভের কাছাকাছি এলাকায় ১০টির বেশি ড্রোন ধ্বংস করা হয়।
এদিকে, লুটস্ক শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্ফোরণের তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করা হচ্ছে। পোলান্ড সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছে, রুশ হামলার পর মিত্রদের বিমানের সঙ্গে যৌথভাবে তারা সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। হামলায় দেশটির সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল আক্রান্ত হয়েছিল। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রিয়ে ইয়েরমাক প্রতিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘আমাদের হামলা করার জন্য রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।’
হামলার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য করা হয়নি। বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনার অভিযোগ দু’পক্ষই বরাবর অস্বীকার করে আসছে। প্রত্যেকেরই দাবি, প্রতিপক্ষের যুদ্ধ প্রচেষ্টা দুর্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করাই তাদের উদ্দেশ্য।