নেতানিয়াহুর কঠিন ৪ শর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
গাজায় ইসরাইল সেনাদের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে দফায় দফায় আলোচনা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সবশেষ বৃহস্পতিবার কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতারের দোহায় আরেক দফা আলোচনা হয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে। তবে সেই আলোচনা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চারটি কঠিন শর্তের কারণে। আনাদুলু এজেন্সি।
গাজার যুদ্ধবিরতিতে শুরু থেকেই নানা টালবাহানা করে আসছে ইসরাইল। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার প্রথম শর্ত- উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে গাজায় নতুন করে ইসরাইলি বাহিনী ‘নেতজারিম করিডর’ তৈরি করেছে। মধ্য গাজা থেকে উত্তর গাজায় সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের এই করিডর অতিক্রম ঠেকানো নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত- মিসর সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডর এবং মিসর ও গাজার মধ্যকার রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে থাকবে। গত মে মাস থেকে এই করিডর ও ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল। তৃতীয় শর্তে নেতানিয়াহুর দাবি, গাজায় কতজন ইসরাইলি বন্দি জীবিত আছেন, সে তথ্য দিতে হবে হামাসকে; আর তাদের বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। সর্বশেষ শর্তে নেতানিয়াহুর দাবি, হামাস মুক্ত করতে চায় এমন যে কোনো বন্দির মুক্তির বিষয়টি নাকচ করে দেওয়ার অধিকার চায় ইসরাইল। একই সঙ্গে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায় দেশটি।
এর আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তির জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠকে যোগ দিয়েছে ইসরাইল। তবে এতে অংশ নেয়নি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসাবে পরিচিত কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইল ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অনবরত হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময়ের জন্য ইসরাইল এবং হামাসকে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার প্রথম দিন ছিল। তবে আলোচনায় অংশ নেয়নি হামাস। এ অবস্থায়ই শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো ওই বৈঠক আবার শুরু হচ্ছে।
হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে ১৬ হাজারের বেশি শিশু। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হামাস। এদিকে দোহায় চলা বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথমদিনের বৈঠকে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হামাসের একজন সদস্য হোসাম বদরান বলেন, ‘গাজায় যেভাবে হামলা চালানো হচ্ছে তা উপত্যকাটির যুদ্ধবিরতির অগ্রগতির পথে বাধা। এজন্য হামাসের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবারের আলোচনায় যোগ দেননি।’
পশ্চিম তীরে বাড়ি-গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা: অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি গ্রামে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে একটি গ্রামের কয়েকটি বাড়ি, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নাবলুসের জিট গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত ও আরেকন গুরুতর আহত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, জিট গ্রামে বাড়িঘর ও যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের ওপর দিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠতে দেখা যায়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এ ঘটনার স্বীকার করে বলেছে, কিছু মুখোশ পরা বসতি স্থাপনকারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিট গ্রামে হামলা চালায়। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। এরই মধ্যে একজনকে আটকও করা হয়েছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলি রাজনৈতিক নেতারা জানান, তারা হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।