প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করল থাই আদালত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনকে তার পদ থেকে অপসারণ করেছে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত। শুধু থাভিসিনই নয়, তার পুরো মন্ত্রিসভাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
বুধবার নৈতিকতার এক মামলায় থাভিসিনের বিরুদ্ধে ওই রায় দিয়েছে আদালত। যা এখন দেশটিকে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এদিন থাইল্যান্ডের সাবেক জান্তা সরকারের নিয়োগ করা সাবেক একদল সিনেটরের করা মামলায় শ্রেথা তার মন্ত্রিসভায় ফৌজদারি দোষী সাব্যস্ত একজন আইনজীবীকে নিয়োগ করে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন বিচারকরা।
এর আগে একই আদালত দেশটির প্রধান বিরোধী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে বিলুপ্ত করে রায় দেয়। সেই সঙ্গে দলটির সাবেক নেতাকে ১০ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষাণা করে। এর এক সপ্তাহ পরই এ রায় দিল আদালত।
রায় পড়ার সময় বিচারক পুণ্য উদচাচন বলেন, আদালত ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রায় দিয়েছে যে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব বাতিল করা হয়েছে। কারণ তিনি দোষী সাব্যস্ত একজন আইনজীবীকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সততা দেখাননি।
বিচারক বলছিলেন যে, শ্রেথা থাভিসিন নিশ্চয়ই ২০০৮ সালে পিচিত চুয়েনবান নামে ওই আইনজীবীর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কথা জানতেন, যখন তিনি তাকে মন্ত্রিসভায় নিয়োগ করেছিলেন।
পুণ্য উদচাচন আরও বলেন, এতে এটা প্রমাণিত হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর কোনো সততা নেই এবং তিনি নৈতিক মান লঙ্ঘন করেছেন।
এদিকে আদালতের এ রায়ের ফলে এক বছরেরও কম সময় দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন পদত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন ফিউ থাই পার্টির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।
গত দুই দশক ধরে দীর্ঘস্থায়ী একটা অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে থাই রাজনীতি। অভ্যুত্থান, রাস্তায় বিক্ষোভ এবং আদালতের আদেশের মাধ্যমে একের পর এক সমস্যায় জর্জরিত দেশটি বেশিরভাগ সময় সামরিক, রাজতন্ত্রপন্থি প্রতিষ্ঠা এবং ফিউ থাই নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে যুক্ত প্রগতিশীল দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘকালীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে আদালতের রায়ে শুধু শ্রেথা থাভিসিনই নয়, তার পুরো মন্ত্রিসভাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পার্লামেন্টকে এখন বৈঠক করতে হবে।
শ্রেথার বিরুদ্ধে মামলাটি মূলত পিচিত চুয়েনবান নামে এক আইনজীবীকে মন্ত্রিসভায় নিয়োগকে কেন্দ্র করে করা হয়। যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক মালিক এবং রক্ষণশীল রাজতন্ত্রপন্থি, সামরিকপন্থি অভিজাতদের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন।
দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধে ২০০৮ সালে ছয় মাসের কারাদণ্ডেও দণ্ডিত হন পিচিত। অবশ্য শ্রেথাকে বাঁচানোর জন্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগও করেছিলেন তিনি। তবে আদালত থাইল্যান্ডের সাবেক জান্তা সরকার নিযুক্ত সিনেটরদের অভিযোগের ভিত্তিতে করা একটি মামলায় শ্রেথাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
যে ৪০ জন সিনেটর এ অভিযোগ এনেছিলেন, তারা সবাই ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত ফিউ থাই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক জান্তা সরকারের নিয়োগকৃত।
এক বছরেরও কম সময় আগে সেনা সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পর ফিউ থাইয়ের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন শ্রেথা।
আদালতের এ রায়ে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে রক্ষণশীল এস্টাবলিশমেন্ট এবং ফিউ থাই এবং এর নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী এমএফপির মতো প্রগতিশীল দলগুলোর মধ্যে পুরনো বিভাজন তুলে ধরা হয়েছে।
থাইল্যান্ড ২০০০ সালের শুরু থেকে থাকসিন সিনাওয়াত্রা এবং তার মিত্রদের আধিপত্যের জন্য লড়াই করার সময় সামরিক অভ্যুত্থান, আদালতের রায়, বিক্ষোভ এবং নির্বাচনের একটি চক্র সহ্য করে আসছে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস