Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আব্রাহাম জোট বনাম প্রতিরোধ অক্ষ: কী ঘটতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম

আব্রাহাম জোট বনাম প্রতিরোধ অক্ষ: কী ঘটতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে?

গত মাসে মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন আঞ্চলিক জোটের কথা প্রকাশ করেছিলেন, যার নাম ‘আব্রাহাম জোট’। এই জোটটি মূলত আব্রাহাম চুক্তির একটি বর্ধিত রূপ। যার লক্ষ্য ইরানি প্রভাবের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কযুক্ত দেশগুলোকে একত্রিত করা। বিশেষ করে‘প্রতিরোধ অক্ষ’ নামে পরিচিত ইরান সমর্থিত প্রক্সি বাহিনীর নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে।

আব্রাহাম জোট
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সই হওয়া আব্রাহাম চুক্তির ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো, সুদানসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। এই আব্রাহাম চুক্তির ওপর ভিত্তি করেই মূলত নেতানিয়াহু আব্রাহাম জোটের বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন, যে জোটে ইসরাইল তার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এ জোটের লক্ষ্য নেতানিয়াহুর বড় শত্রু ইরানকে প্রতিহত করা।

সেদিন মার্কিন কংগ্রেসের কাছে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উইনস্টন চার্চিলের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালীন সেই ঐতিহাসিক আবেদনের প্রতিধ্বনি ধরে বলেন, ‘আমাদের সামরিক সরঞ্জাম দিন, আমরা কাজটি শেষ করব’। তিনি বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা পাওয়া ইসরাইলের জন্য অপরিহার্য।

এদিকে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ হওয়ার কারণে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা-সক্ষম জাহাজ এবং একটি নতুন ফাইটার স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে। 

ইসরাইল এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয়ের সঙ্গে মিলে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং ইরানের কাছ থেকে আসা সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তার মার্কিন মিত্র লয়েড অস্টিন এবং ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও করেছেন।

এদিকে ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেলে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সামরিক শক্তি ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন-

ইরান সমর্থিত প্রতিরোধ অক্ষ
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান প্রক্সি গ্রুপের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ অক্ষ নামে পরিচিত। এ নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি, ইরাকের বিভিন্ন মিলিশিয়া এবং সিরিয়া ও গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এ প্রক্সি গ্রুপগুলো ইরানের কৌশলগত স্বার্থে কাজ করে, যা ইরানকে সমগ্র অঞ্চলজুড়ে প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার ও চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেয়।

হিজবুল্লাহ
আশির দশকের গোড়ার দিকে লেবাননে ইরানের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রক্সি হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে। ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসির মাধ্যমে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাওয়া হিজবুল্লাহ তেহরানের শিয়া ইসলামপন্থী মতাদর্শ লালন করে এবং প্রাথমিকভাবে লেবাননের শিয়া মুসলিম জনসংখ্যা থেকেই কর্মী বাছাই করে। মূলত লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গঠিত হিজবুল্লাহ একটি শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তিতে বিকশিত হয়েছে। যাদের হাতে অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের এক বিশাল অস্ত্রাগার রয়েছে।

হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)
ইরান ফিলিস্তিন অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ গোষ্ঠীগুলোও ইরানের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেয়ে ইসরাইলের বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরোধ সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।

সিরিয়ায় আসাদ সরকার
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে ইরানের জোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তেহরান আসাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য প্রায় ৮০ হাজার সেনাসহ যথেষ্ট সামরিক সহায়তা দিয়েছে। উপরন্তু সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন করার জন্য ইরান বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীকে সংগঠিত ও সমর্থন করেছে। যেমন- জয়নাবিয়ুন ব্রিগেড (পাকিস্তানি যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত) এবং ফাতেমিয়ুন ডিভিশন (আফগান হাজারা যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত)।

ইয়েমেনের হুথি
ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন আঞ্চলিক সংঘাতের মূল খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মূলত নব্বইয়ের দশকে গঠিত এবং ২০১৪ সালের পর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠা হুথিরাও আইআরজিসির মাধ্যমে সামরিক এবং আর্থিক সমর্থন পেয়ে আসছে।

ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া
২০০২ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর, ইরানের সমর্থনে দেশটির ভূখণ্ডে বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উল্লেখযোগ্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাতাইব হিজবুল্লাহ, আসাইব আহল-হক এবং বদর সংগঠন। এই মিলিশিয়ারা প্রায়ই মার্কিন বাহিনীকে টার্গেট করে হামলা করছে এবং তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।তথ্য সূত্র: এনডিটিভি

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম