ইউক্রেনের একটি সামুদ্রিক ড্রোন
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, ক্রিমিয়া উপত্যকায় নোঙর করা অবস্থায় থাকা রাশিয়ার একটি সাবমেরিন তারা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা কিলো ক্লাস সাবমেরিন দ্য রুস্তভ-অন-ডন বন্দর নগরী সেভাস্তপোলে শুক্রবারের ওই হামলার পর ডুবে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরে মোতায়েন থাকা চারটি সাবমেরিনের একটি হলো এই সাবমেরিন, যা ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপে সক্ষম। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের হামলায় ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার চারটি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ওই উপত্যকা দখল করে নিয়েছিল।
এর আগে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত সেপ্টেম্বরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রুস্তভ-অন-ডন ‘সম্ভবত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছিল। এটি তখন সেভাস্তপোল শিপইয়ার্ডে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমেও আওতায় ছিল।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, এরপর এটিকে সংস্কার করে সম্প্রতি সেভাস্তপোলের কাছে এর সক্ষমতাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এর মূল্য প্রায় তিনশ মিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে তারা।
‘রুস্তভ-অন-ডনের ধ্বংস আবারো প্রমাণ করলো যে, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের সীমানার মধ্যে কোনো রুশ জাহাজ নিরাপদ নয়,’ শনিবার কিয়েভে জেনারেল স্টাফের বিবৃতিতে বলা হয়।
এতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেভাস্তপোলের রুশ নৌ বাহিনীর ওপর হামলাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়। শুধু মাত্র মার্চ মাসেই দুটি জাহাজ এবং টহল নৌযানে আঘাত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিনা উস্কানিতেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার নৌবাহিনী বেশ বড় কয়েকটি হামলার শিকার হয়েছে।
ইউক্রেন বলছে, তারা অন্তত ১৫টি যুদ্ধজাহাজ হয় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অথবা ডুবিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কৃষ্ণ থাকরে থাকা মস্কভাও রয়েছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছিল যে, বারবার হামলার কারণে মস্কো আজভ সাগর থেকে তাদের সব নৌযান প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে।
আর রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি সার্ভিস- দ্য এফএসবি সম্প্রতি বলেছে, তারা বিমানবাহী রণতরী - দ্য এডমিরাল কুজনেটসভ ধ্বংসের একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।
১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই জাহাজটি ২০১৮ সাল থেকে রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আছে।
অন্যদিকে কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো রাশিয়ার একটি বড় বিমানঘাঁটি ও তেল সংরক্ষণাগার লক্ষ্য করে হামলা করেছে।
হামলাটি হয় মরোজোভস্ক বিমান ঘাঁটিতে।
সেখানে গাইডেড বোমা মজুদ রেখেছে রাশিয়া, যা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা করা হয়েছে।
অনলাইন ফুটেজে দেখা যায়, ওই ঘাঁটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর ব্যাপক আগুন দেখা যায়। মনে হচ্ছিলো, গোলাবারুদের মজুদে কয়েক দফা হামলা চালানো হয়েছে।
রাশিয়া বলেছে, বেশ কিছু ড্রোন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ওই ঘাঁটি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রোস্তভ, ক্রুস্ক ও বেলগরদ অঞ্চলে কিছু তেল সংরক্ষণাগারকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিলো।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া এক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে ছয়শর মতো গাইডেড বোমা নিক্ষেপের পর এসব হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার বিমান থেকে গোলাবারুদ নিক্ষেপ বন্ধ করা ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলা যৌক্তিক।
যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে কিয়েভকে সীমান্ত সংলগ্ন কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুমতি দিয়েছে।
এর আগে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের সহযোগী দেশগুলো কিছুটা ইতস্তত করছিল।
এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে লিথুনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রথম চালান ইউক্রেনে পৌঁছেছে। কিয়েভের নেটো সহযোগীদের এটা দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার ছিল।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মনে করেন, এসব যুদ্ধবিমানকে কেন্দ্র করে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হবে।
এছাড়া নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ছয়টি জেট বিমানও দেশটিতে পৌঁছেছে। যদিও ডাচ প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কিয়েভের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, রণাঙ্গনে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকাতে এই জেট বিমানগুলো সহায়তা করবে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির পূর্বাঞ্চলে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে।