হানিয়া-হত্যার জবাব দিতে যে প্রস্তুতি নিয়েছে ইরান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম
ইরান দখলদার ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইরান তার ভূখণ্ডে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানানোর জন্য, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইসরাইলের এ ধরনের পদক্ষেপের বিপদের ওপর জোর দেওয়ার জন্য এবং রাজনৈতিক, নৈতিক এবং আইনগত দিক থেকে ইসরাইলের অপরাধের প্রতিক্রিয়া জানানোর বৈধতা পাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে যে কাজগুলো করছে তা নিচে তুলে ধরা হলো-
সম্প্রতি ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ তার দোহা সফরকালে কাতারের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি শুক্রবার ইসমাইল হানিয়ার জানাজা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দোহা সফর করেন।
ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাকেরি কানি সম্প্রতি রাশিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, আলজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করে সমর্থন আদায় করেন।
বাকেরি কানি জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে ফোনালাপে বলেন, ইরান ইসরাইলি অপরাধীদের আইন ও বিচারের মুখোমুখি করবে। কারণ, ইসরাইলের মোকাবিলা না করলে এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা সত্যিকারের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তেহরানে হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ রেড লাইন অতিক্রম করেছে বলেও জোর দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় হানিয়া হত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং একে ‘জঘন্য অপরাধ’ এবং ‘ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এছড়াও বাকেরি কানি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস এবং ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গেও পৃথক ফোনালাপ করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
বোরেলের সঙ্গে আলাপকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেহরানে হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার চরম লঙ্ঘন এবং ইরান অবশ্যই অপরাধী ইহুদিবাদী শাসককে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার অন্তর্নিহিত এবং বৈধ অধিকার ব্যবহার করবে।
বাকেরি কানি এ সময় জোর দিয়ে বলেন, কিছু ইউরোপীয় দেশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ইয়েমেন ও লেবাননে ইসরাইলের ক্রমাগত বৃদ্ধি করা যুদ্ধ-উদ্দীপনার বিষয়ে তাদের নীরবতা নেতানিয়াহু সরকারকে তার আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। যা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
জবাবে ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের বৃদ্ধি এবং জনগণের ওপর এ সমস্যার ভয়াবহ পরিণতির বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে ইরানের গোয়েন্দা নিরাপত্তা মন্ত্রী ইসমাইল খতিবও জোর দাবি করে বলেছেন, তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে সবুজ সংকেত দিয়ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটি ইসরাইলিকে সব ধরনের সহায়তা দিতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো শনিবার হানিয়া হত্যার বিষয়ে ইরানের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনুমানমূলক দৃশ্যকল্প তৈরি করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে।
পশ্চিমা মিডিয়ার দাবি, ইরানের ‘হানিয়া হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ’ শিরোনামে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করা যায় না। কারণ সেগুলো মিথ্যা এবং কেবল অনানুষ্ঠানিক অনুমান মাত্র।
শনিবার ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস বা আইআরজিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেহরানে হানিয়ার বাসভবন লক্ষ্য করে চালানো হামলায় হামাস নেতা এবং তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হানিয়া হত্যাকাণ্ডের পদক্ষেপটি বর্বর ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠির পূর্ব পরিকল্পিত এবং এটি মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থনে ঘটানো হয়েছে’।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হানিয়ার বাসভবনের বাইরে থেকে শক্তিশালী বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। যেটি ছিল প্রায় ৭ কেজি ওজনের এবং একটি ওয়ারহেডসহ একটি স্বল্প-পাল্লার প্রজেক্টাইলের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।
হানিয়ার রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, সন্ত্রাসী ইসরাইলি সরকার অবশ্যই উপযুক্ত সময় ও স্থানে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে’। সূত্র: মেহের নিউজ