Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হানিয়া-শুকুরকে হত্যা করে কতটা ‘ফায়দা’ নিলেন নেতানিয়াহু?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম

হানিয়া-শুকুরকে হত্যা করে কতটা ‘ফায়দা’ নিলেন নেতানিয়াহু?

ইরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরের হত্যাকাণ্ড ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক লড়াইয়ে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সমর্থন ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে। 

এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যদিও এতে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির আশা হুমকির মুখে পড়তে পারে। 

ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ক ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হিউ লোভাট আল জাজিরাকে বলেছেন, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রমাণের জন্য হানিয়ার হত্যাকাণ্ড দুর্দান্ত ফলদায়ক। এটি নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক সত্য।

গত ৭ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহ থেকেই ইসরাইল অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং বিভাজন দ্বারা বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রথমে নেতানিয়াহু সরকারের বিতর্কিত বিচারিক সংস্কার নিয়ে কয়েক মাস বিক্ষোভের মাধ্যমে, তারপরে প্রধানমন্ত্রীর হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে। এতে হামাসের হাতে বন্দিরা মুক্তি না পাওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার, যা ক্রমবর্ধমান আন্দোলনেও রূপ নিয়েছে। 

চলতি সপ্তাহে অতি-ডানপন্থি এমপি-মন্ত্রীসহ সাধারণ ইসরাইলিরাও ফিলিস্তিনি বন্দিদের নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত সৈন্যদের গ্রেপ্তার করতে জোর দাবি জানিয়েছেন। এমনকি ইসরাইলি বর্বর সৈন্যদের যে ঘাঁটিতে রাখা হয়েছিল, সেখানেও হামলা চালায় ইসরাইলি জনতা। এছাড়াও ইসরাইলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তিও ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে।

তা সত্ত্বেও হানিয়া-শুকুরসহ ইসরাইলি গুপ্তহত্যার এ ধারাবাহিকতা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে। অস্থায়ীভাবে হলেও এটা নেতানিয়াহুকে সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ৩০ জুলাই লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি ব্যস্ত আবাসিক এলাকা দাহিয়াতে ইসরাইল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকুর তার অ্যাপার্টমেন্টে নিহত হন। ফুয়াদ শুকুর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারদের একজন ছিলেন এবং সামরিক কৌশল বাস্তবায়নে তিনি ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানা গেছে।

এর আগে ২৭ জুলাই ইসরাইল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে হামলায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের যে ১২ জন কিশোর-তরুণ নিহত হয়, তার প্রতিক্রিয়া হিসাবেই ইসরাইল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে। ইসরাইল গোলানে ওই হামলার জন্য হিজবুল্লাহকেই দায়ী করে আসছে। যদিও হিজবুল্লাহ এর দায় স্পষ্টভাবেই অস্বীকার করেছে।

এদিকে ফুয়াদ শুকুরকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা বাদেই ইসরাইল তেহরানে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ব্যক্তিটিই হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মূল ভূমিকা পালন করছিলেন। 

ইরানের নতুন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে অবস্থানকালে হানিয়া নিহত হন। ইসরাইল যদিও এ হামলার দায় এখনও স্বীকার করেনি, তবে ইরান ও হামাস উভয়েই এর জন্য ইসরাইলকেই দায়ী ঘোষণা করেছে।

এদিকে হানিয়া নিহত হওয়ার একদিন পর বৃহস্পতিবার ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, তাদের বাহিনী ১৩ জুলাই গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের আরেক শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ দেইফকেও হত্যা করেছে। দেইফ হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ইসরাইল তাকে বছরের পর বছর ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রেখেছিল।

এসব বিষয়ে হিউ লোভাট আল জাজিরাকে বলেন, আমি মনে করি ইসরাইলি সমাজে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যেখানে তারা বলতে পারে যে, গাজা যুদ্ধ নিয়ে সমস্ত নিন্দা এবং উদ্বেগ সত্ত্বেও তারা এখন হামাসকে আক্রমণ করতে পেরেছে এবং এখন হিজবুল্লাহর শক্তিকে কমিয়ে দিয়ে উত্তম কাজটাই করছে। 

এর আগে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সাধারণ ইসরাইলিরা নেতানিয়াহুকে এবং দেশটির নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেই দায়ী করে এসেছে। 

কিন্তু এখন ইসরাইলি রাজনীতির স্থানীয় বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গের মতে, ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের আংশিকভাবে হলেও দায়মুক্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরও বলছিলেন যে, যদিও অনেক ইসরাইলি সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডকে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে ‘বিজয়’ হিসাবেই দেখছে। তবুও তারা উদ্বিগ্ন, এমনকি ইরান এবং সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা প্রতিশোধমূলক আক্রমণের বিষয়ে দারুণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত।

‘এটা নিয়ে ইসরাইলিদের একটা সিজোফ্রেনিয়া আছে’ মন্তব্য করে গোল্ডবার্গ বলেন, ‘এর অর্থ- আমরা আঞ্চলিক বাস্তবতাকে ঝাঁকুনি দিচ্ছি এবং সমস্ত সতর্কতা উপেক্ষা করে আমরা অত্যন্ত উগ্রবাদী পদক্ষেপ নিচ্ছি। অন্যদিকে আবার এও বলছি যে, এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতেই হবে।’

ওরেন জিভ নামে এক ইসরাইলি সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকারও এ বিষয়ে একমত পোষন করেছেন। তার মতে, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী হানিয়াকে হত্যা করে অভ্যন্তরীণভাবে তাদের খ্যাতি পুনরুদ্ধার করেছে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবরের ঘটনা এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার আলোকে ইসরাইল দেখাতে চেয়েছিল যে, তারা তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে। আমিও মনে করি তারা তা প্রমাণ করেছে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড এক দিক থেকে যেমন নেতানিয়াহুকে সুরক্ষা দিয়েছে, তেমনি এটি ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও রক্ষা করেছে’। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম