হানিয়া হত্যার প্রতিক্রিয়ায় কাসসাম ব্রিগেডের হুঁশিয়ারি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
তেহরানে হামলা চালিয়ে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করেছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। এ হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘বিপজ্জনক ঘটনা’ অভিহিত করেছে হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড। সশস্ত্র বাহিনীটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এ ঘটনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বুধবার কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিবৃতিতে গর্ব ও সম্মানের সর্বোচ্চ অভিব্যক্তির সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীটি বলেছে, ‘আমাদের সংগ্রামী ফিলিস্তিনি জনগণ, আমাদের আরব এবং ইসলামিক দেশগুলো এবং বিশ্বের মুক্ত জনগণের প্রতি আল-কাসসাম ব্রিগেড ঘোষণা করছে যে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কমান্ডার আমাদের নেতা ইসমাইল আবদুল সালাম হানিয়া শাহাদতবরণ করেছেন। তেহরানে তার বাসভবন লক্ষ্য করে বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলায় তিনি শহিদ হন। ইসরাইলি বাহিনীর এই নাৎসি অপরাধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করছি:
প্রথমত, আমাদের নেতা ও যোদ্ধা ‘আবু আল-আব্দ’ (ইসমাইল হানিয়া) তার উৎসর্গ, সংগ্রাম এবং ত্যাগে ভরা জীবন যাপনের পর পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। তার পুরো যাত্রায়, তিনি আন্দোলনের বিকাশ ও সংগ্রামের বিভিন্ন স্তরে আমাদের সঙ্গী ছিলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে স্পষ্ট অবদান এবং চিহ্ন রেখে গেছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং প্রতিরোধ আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে, জাতির প্রচেষ্টাকে একত্রিত করতে এবং জেরুজালেমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আল-আকসা এবং এর পবিত্রতা রক্ষায় আমাদের জনগণ এবং জাতির মুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করা সর্বোত্তম যুদ্ধ, ‘আল-আকসা অভিযান’ এবং এর পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধে শাহাদাতের মাধ্যমে তার ইহকালীন জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয়ত, ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে আমাদের নেতা হানিয়ার ওপর সংঘঠিত অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড একটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনক ঘটনা। যা চলমান যুদ্ধকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে এবং সমগ্র অঞ্চলে এর একটি বড় প্রভাব পড়বে। শত্রু রা তাদের আগ্রাসনের পরিধি বিস্তারিত করে বিভিন্ন অঙ্গনে প্রতিরোধ বাহিনীর নেতাদের হত্যা এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে বিশাল এক ভুল করেছে। মানবতার শত্রু যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু জাঁকজমকের বিভ্রান্তিতে অন্ধ হয়ে, দখলদার ইসরাইলকে অধঃপতনের অতল গহ্বরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ইসরাইলের পতনকে ত্বরান্বিত করছেন এবং ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে এই বিষফোঁড়াকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তৃতীয়ত, দখল ইসরাইলের এ বেপরোয়া আচরনের অবসান ঘটাতে হবে এবং আরও আগ্রাসন ঠেকাতে তার প্রসারিত হাতকে কেটে ফেলে প্রবল শত্রুকে দমন করতে হবে। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ফ্রন্টে শত্রুদের ক্রমাগত অপরাধ এ অঞ্চলের সমস্ত জাতি এবং জনগণের জন্য একটি মারাত্মক শঙ্কার বিষয়। যে জন্য সবাইকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে সমর্থন করতে বাধ্য করে। এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমগ্র জাতির জন্য সামনের সারির প্রতিরক্ষা হিসাবে কাজ করে। যে কারণে শত্রুরা হামাসকে চূর্ণ ও দমন করার জন্য এ অঞ্চলের জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আগ্রাসনের দিকে মনোনিবেশের চেষ্টা করে আসছে।
চতুর্থত, আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়ার রক্ত, আজ গাজার শিশু, নারী, যুবক ও প্রবীণদের রক্তে এবং আমাদের জনগণ ও যোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এটা স্পষ্ট করে যে হামাস ও এর নেতারা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, একেবারেই জনগণের পাশাপাশি। ইসমাইল হানিয়ার মূল্যবান রক্ত কিছুতেই বৃথা যাবে না, বরং আলোকিত করবে মুক্তির পথ। গাজা, পশ্চিম তীর এবং এর সীমানার মধ্যে, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যোদ্ধারা যেখানেই পৌঁছাবে, সেখানেই শত্রুরা তাদের রক্ত দিয়ে এ আগ্রাসনের মূল্য দেবে।’ সূত্র: আল-জাজিরা