ভারতের যে গ্রামে কমলা হ্যারিসের জন্য মিষ্টি বিতরণ প্রার্থনা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ছোট্ট একটি গ্রাম থুলাসেনধ্রাপুরাম। এখানেই ছিল কমলা হ্যারিসের নানার বাড়ি। জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রামের বাসিন্দাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ খবরের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। তাকে নিয়ে গর্বিত গ্রামবাসী। বিশেষ করে নারীরা। তারা কমলা হ্যারিসকে নিজেদের একজন ভাবছেন। নারীদের সামনে কমলা এখন এক দৃষ্টান্ত।
গ্রামের কেন্দ্রে সগৌরবে শোভা পাচ্ছে ৫৯ বছর বয়স্ক কমলা হ্যারিসের ব্যানার। তার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছেন গ্রামের মানুষ। মন্দিরে দান করাদের তালিকায় আছে সম্ভাব্য এই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নানার নামও।
ভারতের চেন্নাই শহর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ গ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এর দূরত্ব ১৪ হাজার কিলোমিটার। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই গ্রামের নাম।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কৃষ্ণমূর্তি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির এমন একটি অবস্থানে পৌঁছা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। তার জন্য আমরা গর্বিত। একসময় ভারতীয়দের শাসন করেছে বিদেশিরা। এখন ভারতীয়রা ক্ষমতাধর দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অরুলমোঝি সুধাকর বলেন, সবাই তাকে চেনেন। এমনকি শিশুরাও। ‘আমার বোন, আমার মা’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন তারা। আমরা খুশি যে তিনি তার শিকড়কে ভোলেননি। আমরা আমাদের আনন্দ প্রকাশ করছি।
গ্রামবাসীর এ উত্তেজনা মনে করিয়ে দিচ্ছে, কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কিভাবে গ্রামবাসী রাস্তায় নেমে আসেন তার পোস্টার নিয়ে এবং আতশবাজি ফোটায়।
একটি ভোজেরও আয়োজন করা হয়। সেখানে শত শত মানুষ ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ ভারতীয় খাবার সম্বর ও ইদলি খায়। কমলা হ্যারিসের এক আত্মীয়ের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, এগুলো বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
শ্যামলা গোপালান নামের এক স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের মেয়ে কমলা হ্যারিস। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে বেড়ে ওঠেন শ্যামলা। তার মা-বাবার বাড়ি ছিল থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামে।
গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে হ্যারিস জানান, আমার মা ১৯ বছর বয়সে একা ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বিজ্ঞানী, গণঅধিকার কর্মী এবং একজন মা।
থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামবাসী এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণার প্রতীক্ষা করছেন।
মন্দিরের পুরোহিত নটরাজন জানান, কমলার মায়ের ছোট বোন সরলা এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন। ২০১৪ সালে কমলা হ্যারিসের পক্ষ থেকে মন্দিরে ৫ হাজার রুপি দান করেন তিনি। পুরোহিতের বিশ্বাস, তাদের প্রার্থনা কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করবে।
গ্রামবাসী বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও কমলার এ ভ্রমণে নিজেরাও আছেন বলে ভাবছেন। তারা আশা করছেন কমলা হ্যারিস কোনো একদিন তাদের দেখতে আসবেন কিংবা তার কোনো বক্তব্যে গ্রামটির নাম উচ্চারণ করবেন।
মা মারা যাওয়ার পর বোন মায়াসহ চেন্নাই ভ্রমণ করেন কমলা হ্যারিস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর দেওয়া তথ্য অনুসারে হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে এ সময় মায়ের ছাইভস্ম সাগরে ফেলেন তারা।
কমলা হ্যারিসের বংশে ভালো অবস্থানে পৌঁছা মানুষের সংখ্যা কম নয়। তার মামা গোপালান বালাচন্দ্রন ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। তার নানা পিভি গোপালান ছিলেন একজন ভারতীয় আমলা, যিনি শরণার্থী পুনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে জাম্বিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আর রাজারমন কমলা হ্যারিসের মায়ের সহপাঠী ছিলেন। তিনি জানান, শ্যামলার সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার সঙ্গে পুনরায় দেখা হয় ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময়। এ সময় বার্কলেতে শ্যামলার বাড়িতে তাদের দেখা হয়। শ্যামলা সেখানে ছিল। আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করে। তার দুই মেয়ে কমলা ও মায়া সেখানে ছিল। তারা দুজনেই ছিল খুব উদ্যমী। তাদের মায়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। কমলার মধ্যেও এটা দেখতে পেয়েছি।