
প্রিন্ট: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
রানিংমেট হিসেবে ভ্যান্সকেই কেন পছন্দ ট্রাম্পের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন
জে. ডি ভ্যান্সকে এক সময় ধরা হতো ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ট্রাম্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পালটেছে তার। সময়ের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্টের একজন স্পষ্টবাদী রক্ষক হয়ে উঠেছেন ওহাইও অঙ্গরাজ্যের এই সিনেটর। এই মধ্যে তাকে রানিংমেট বা নিজের পরবর্তী প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে গত কয়েকদিন ধরে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে এক সময়ের বিরোধীকেই কেন বেছে নিলেন ট্রাম্প?
গত সোমবার ট্রাম্প রানিংমেট নিয়ে তার পছন্দের কথা প্রকাশ করেন। তিনি হলেন লেখক, বিনিয়োগকারী ও ওহাইওর সিনেটর জে ডি ভ্যান্স।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যান্সকে রানিং মেট করা ট্রাম্পের কৌশল বদলের প্রতিফলন। ইতিপূর্বে তার রানিং মেট ছিলেন মাইক পেন্স। নির্বাচনি প্রচারে পেন্সের প্রভাব ছিল মধ্যপন্থি। নতুন পছন্দ হিসেবে ভ্যান্সকে বেছে নেওয়াটা ট্রাম্পের কট্টর ডান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার ইঙ্গিত। রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পুরোনো ভাবধারা থেকে বেরিয়ে আসারও ইঙ্গিত এটি।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির মার্কিন ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক অ্যালান লিচম্যান আল–জাজিরাকে বলেন, জে ডি ভ্যান্স দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটার বা ট্রাম্পের রাজনীতি নিয়ে সংশয় পোষণকারীদের মধ্যে হয়ত সাড়া ফেলতে পারবেন না। তাকে বেছে নেওয়া এ নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে বলেও আমি মনে করি না। তবে তাকে রানিং মেট করা রিপাবলিকান পার্টি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে অনেক কথা বলছে।
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সার্বিকভাবে খারাপ ফলাফল করেন ট্রাম্পের অনুমোদন পাওয়া প্রার্থীরা। সে সময় দলের ভেতর থেকে কেউ কেউ প্রকাশ্যে ট্রাম্পের নির্বাচনি সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে ভ্যান্স ট্রাম্পের প্রতি তার সমর্থন দ্বিগুণ করেন। তখন ‘ট্রাম্পকে দোষ দেবেন না’—এমন শিরোনামে নিবন্ধও লেখেন তিনি।
লিচম্যান আভাস দেন, রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া নিকি হ্যালির মতো কাউকে ট্রাম্প রানিং মেট হিসেবে বেছে নিলে বরং ‘মিডল গ্রাউনড’ ভোটারদের নজর কাড়তেন।
সুর পাল্টে ফেলে উত্থান
ভ্যান্স সব সময় যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তা নয়। অতীতে ভ্যান্স নিজেকে ‘কখনো ট্রাম্পের অনুসারী নন’ বলে বর্ণনা করেছেন। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিন্দনীয় ও নির্বোধ ব্যক্তি হিসেবেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
২০১৬ সালের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়েছে। যেখানে ভ্যান্সকে তার এক বন্ধুকে বলতে শোনা যায়, ট্রাম্প একজন ‘আহম্মক’ নাকি, ‘আমেরিকার হিটলার’ তা তিনি বুঝতে পারেন না।
কিন্তু ২০২২ সালে ভ্যান্স যখন সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন সুর পাল্টান। ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্টাইল অনুসরণ করেন তিনি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে চুরি করা হয়েছে, তিনি বারবার এমন মিথ্যা দাবি করেন। শেষমেশ রিপাবলিকান দলীয় সিনেট প্রার্থী হিসেবে ভ্যান্স সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদন পান।
গণমাধ্যমের খবরে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জনসমক্ষে ভ্যান্সের ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমে নিয়মিত উপস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্টের আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া বক্তব্যে প্রভাবিত হয়েছেন ট্রাম্প।
এমনকি সিনেটের সদস্য হিসেবে জেতার পরও ভ্যান্স ট্রাম্পের প্রশংসা চালিয়ে যান এবং তার সমালোচকদের আক্রমণ করতে থাকেন।
অধ্যাপক লিচম্যান বলেন, ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে ভ্যান্সের অতীত রেকর্ডকেও নিজ গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে কাজে লাগাবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এটি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে ট্রাম্প বলতে যাচ্ছেন, ‘আমি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন আমার নীতি ও নেতৃত্ব এতই মহান ছিল যে জে ডি ভ্যান্সসহ আমার কঠোর সমালোচকদেরও বদলে ফেলেছি’
নতুন দিকে পররাষ্ট্রনীতি?
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভ্যান্স দলের সেকেলে নীতি ভেঙে ফেলার আগ্রহ দেখিয়েছেন; যা বহির্বিশ্বে মার্কিন সামরিক অভিযানে পুরোদমে সমর্থন দেওয়ার কৌশল থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
একই অনুভূতি নিজে ধারণ করার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট (সবার আগে আমেরিকা) নীতিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচার চালাচ্ছেন।
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এ বিভেদ রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতেও দেখা গেছে। সেখানে নিকি হ্যালির মতো প্রার্থীরা অধিকতর সেকেলে অবস্থান গ্রহণ করেছেন; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মিত্র জোট ন্যাটোর পক্ষে ও ইউক্রেনের মতো দেশগুলোকে মার্কিন সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রশ্নে।
অন্যদিকে ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধিতা ও ইসরায়েলের প্রতি তার দেশের সমর্থনের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।