‘বাংলা ভাষার কসম খেয়ে’ শান্তি রক্ষার অনুরোধ কবীর সুমনের
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৬:১১ পিএম
ছবি সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চলমান এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়েছে পাশের দেশ ভারতেও। পশ্চিমবঙ্গের তারকা অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি, সঙ্গীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ীর পর এবার সরব হয়েছেন কিংবদন্তি গীতিকার, গায়ক কবীর সুমন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরুতে শান্তিপূর্ণ হলেও শেষ দিকে রুপ নিয়েছে সহিংসতায়। প্রাণহানি ঘটেছে অর্ধডজনেরও চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সংঘর্ষ ছড়িয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। এমন অবস্থায় সব পক্ষকে শান্তির বার্তা দিলেন দুই বাংলায় জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী।
বুধবার নিজের ফেসবুক পোষ্টে কবীর সুমন লিখেন, ‘...বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন, আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত, তা–ও তো ঠিকমতো জানি না। তা–ও করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি, অনুগ্রহ করে হিংসা, হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি, বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেয়।’
‘আর কী বলি, আমি তো সশরীর যেতে পারছি না ঢাকায়, পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সবাইকে শান্তিরক্ষার জন্য আহ্বান করতাম।’
ভারতের নাগরিক হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কবীর সুমনের যোগাযোগ অনেকদিনের। গানের সুবাদে বাংলাদেশে এসেছেন বহুবার। বাংলাদেশের রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি তাই নজর এড়ায়নি তার।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয়–আসয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই–বা কেন। ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট/ ভেঙে ফেল্ কর্রে লোপাট’; মনে হচ্ছে, গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে। কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই, মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।’
‘আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গেছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা ভালোবাসার বন্ধনে।’
শেষে তিনি লিখেছেন, ‘হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ। বাঁচুন বাংলাদেশের সবাই। জয় বাংলাদেশ, জয় মুক্তিযুদ্ধ, জয় অসংখ্য বাংলাদেশির শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতিস্বীকার। জয় বীরাঙ্গনার। জয় বাংলা ভাষার।’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য আরেক পোষ্টে কবীর সুমন একটি গানও লিখেছেন। যার যার শুরুতেই প্রশ্ন তুলেন, ‘বিরোধী হলেই রাজাকার!/ বলে দাও তবে দেশটা কার/ দেশটা কার দেশটা কার!’