একক শক্তি খুইয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে সরকার গড়তে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে। সেই প্রেক্ষাপটে তৃতীয় মেয়াদের স্থায়িত্ব নিয়ে যখন জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনা জারি রয়েছে, তখন মুম্বাই সফরে গিয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, এই মোদি সরকার ‘নড়বড়ে’। বেশি দিন চালাতেও পারবে না।
প্রসঙ্গত, এর আগেও মমতা এ কথা বলেছেন। কিন্তু তা তিনি বলেছিলেন এককভাবে। শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক নেতার সঙ্গে আলোচনার পরে মমতা আবার ওই একই কথা বলায় তা বাড়তি ‘গুরুত্ব’ পেয়েছে।
শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ পুত্র অনন্তের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বাই গিয়েছেন মমতা। শুক্রবার তিনি দেখা করেন মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে। সেই বৈঠকে ছিলেন উদ্ধব-পুত্র আদিত্যও। উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করার পর মমতা যান শরদ পওয়ারের বাড়িতে। উদ্ধবের বাড়িতে বৈঠকের পর মমতা বলেন, কেন্দ্রের এ সরকার স্থায়ী নয়। বেশি দিন চালাতেও পারবে না।
মোদি সরকারকে এই দফায় সমর্থন দেওয়ার প্রধান মুখ তেলুগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু এবং সংযুক্ত জনতা দলের নীতীশ কুমার। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, টিডিপি এবং জেডিইউ নামক দু’টি ক্রাচের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তৃতীয় মোদি সরকার। মমতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, তিনি কি চন্দ্রবাবুদের ভাঙিয়ে আনার ইঙ্গিত করতে চাইছেন? জবাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি কোনও ব্যাক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করব না। কারও বিরুদ্ধেও বলব না। কারও পক্ষেও বলব না।
মমতা যখন হাতজোড় করে এই জবাব দিচ্ছেন, তখন দেখা যায় উদ্ধব-পুত্র আদিত্য তার পাশের চেয়ারে বসেই মিটিমিটি হাসছেন। তৃণমূলনেত্রী এ-ও বলেন, খেলা শুরু হয়ে গেছে। খেলা চলতে থাকবে। সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট। মমতা জানিয়েছেন, ওই ভোটে তিনি উদ্ধব শিবিরের হয়ে প্রচার করবেন। লোকসভা নির্বাচনে উদ্ধব, শরদদের মহাজোট বিজেপিকে যেভাবে ধাক্কা দিয়েছে, তারও প্রশংসা করেন মমতা। তার কথায়, উদ্ধবের হাত থেকে দলের প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরেও তিনি সত্যিকারের বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করেছেন।
মুম্বাইয়ে গেলেও তিনি কেন কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন না, সেই প্রশ্নেরও জবাব দেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, এখানে (মুম্বাই) আগে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন মুরলি দেওরা। তার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন এখানকার কোনও কংগ্রেস নেতার সঙ্গেই আমার পরিচয় নেই। পাশাপাশি মমতা বলেন, বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি এক হয়ে লড়েছিল। তবে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করছে এবং করবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিল্পপতি সজ্জন জিন্দলও তাকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের অভাবে তিনি যেতে পারছেন না। শনিবার মমতার কলকাতায় ফেরার কথা। শরদের বাড়ির বৈঠকে ছিলেন সুপ্রিয়া সুলে, রোহিত পওয়ারেরা। বৈঠকের পরে রোহিত বলেন, মমতাদিদির সঙ্গে শরদের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তিনি এসেছিলেন। একেবারেই পারিবারিক আলাপচারিতা হয়েছে। রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।