জামিন শুনানির আদেশে ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুললেন বিচারক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
কারাবন্দি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান তার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে জনগণকে সামরিক স্থাপনা, সরকারি সম্পত্তি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের (এটিসি) বিচারক খালিদ আরশাদ তার এক আদেশে এ অভিযোগ করেন।
বিচারক খালিদ এদিন জিন্নাহ হাউসে হামলাসহ গত বছরের ৯ মে’র সহিংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নথিভুক্ত একটি মামলায় তার জামিনের আবেদন খারিজ করার বিস্তারিত আদেশ জারি করেন।
সংক্ষিপ্ত এই আদেশে ইমরানের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন তিনি।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষীর বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, ইমরান খান তাকে মুক্তি দিতে চাপ সৃষ্টির জন্য কেবল জনগণকে উসকেই দেননি, এমনকি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সামরিক সংস্থার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের কাজও দিয়েছিলেন।
তবে এই মামলার সত্যতা নিয়ে ইমরানের আইনজীবী ব্যারিস্টার সালমান সফদার প্রশ্ন তুলেছিলেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, মামলাকারীরা যারা ইমরান এবং তার দলের অন্য নেতাদের এমন ষড়যন্ত্র করতে দেখেছেন, সেই কর্মকর্তাদের নাম কেন প্রকাশ করা হয়নি, এমনকি প্রথম এফআইআরেও উল্লেখ করা হয়নি, কেন?
ব্যারিস্টার সালমান সফদার আরও প্রশ্ন তোলেন, কেন ওই কর্মকর্তারা তাদের উচ্চপদস্থদের সামনে এই ষড়যন্ত্রটি প্রকাশ করতে এড়িয়ে গেলেন? যদি এটি সত্যিই একটি ষড়যন্ত্র হতো!
আদেশে আরও বলা হয়েছে, মামলায় প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষী ১৬১ সিআরপিসি ধারার অধীনে তাদের বয়ান রেকর্ড করেছেন। ওই রেকর্ডে দাবি করা হয়েছে, পিটিশনকারী ইমরান খান ২০২৩ সালের ৭ মে বিকাল সোয়া ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে জামান পার্কে পিটিআইয়ের ১৫ জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন। এ সময় ইমরান তাদের জানান যে, তিনি আশঙ্কা করছেন, ৯ মে ইসলামাবাদে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ইমরান তখন তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তার গ্রেফতারের পর তারা সবাই ড. ইয়াসমিন রশিদের নেতৃত্বে পিটিআই কর্মীদের জড়ো করবে এবং তার মুক্তির জন্য সরকার ও সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সামরিক স্থাপনা, সরকারি সম্পত্তি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাবে।
এর প্রেক্ষিতে ইমরান খান ৯ মে ইসলামাবাদে যাওয়ার সময় একটি ভিডিও বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। যাতে তিনি বলেন যে, ‘আমাকে গ্রেফতার করা হলে দেশের অবস্থা শ্রীলংকার মতো খারাপ হবে।’
পিটিআই’র অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া ইমরানের আরেকটি ক্লিপও বিচারকের হাতে এসেছে। যাতে ৯ মে পিটিআই কর্মীদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি সারাদিন সম্প্রচার করা হয়।
এসব উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা রেকর্ডিংয়ের জন্যই মূলত ইমরানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে সরকারি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ইমরান খানের রাজনৈতিক নিপীড়নের কথিত বিদ্বেষমূলক অভিযোগটি বিচক্ষণতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারক খালিদ আরশাদ তার ওই আদেশে বলেন, একজন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে যখন সে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে, তা প্রচার করে এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেয়, যারা রাষ্টযন্ত্রকে অচল করার উদ্দেশে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে জিন্নাহ হাউসের মতো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি এবং সরকারি যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ১৯৯৭-এর ধারা ৬ অনুযায়ী তার অপরাধী। তিনি (ইমরান) একজন আইন মেনে চলা নাগরিকের স্বাভাবিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন।
পরিশেষে ইমরান খানের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে এটিসি বিচারক বলেন, এসব অপরাধমূলক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবেদনকারী ইমরান খান জামিনের অযোগ্য। তিনি তো সেই অপরাধী যিনি সরকার পতনের জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতৃত্ব এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়ন করেছিলেন। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন