পুনর্নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে থাকা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে যাচ্ছেন কিনা- এমন গুঞ্জনের মধ্যেই শুক্রবার এমন অঙ্গীকারের কথা জানান।
৮১ বছর বয়সি এই নেতা এদিন উইসকনসিনের ম্যাডিসনে এক সমাবেশে সিএনএনের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে তার নেতিবাচক পারফরমেন্সের বিষয়টিও স্বীকার করেন।
এবারের নির্বাচনেও উইসকনসিন একটি নির্বাচনি রণক্ষেত্র বা ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত রাজ্য।
এখানকার সমাবেশে বাইডেন বলছিলেন, ‘এরপর থেকে অনেক জল্পনা-কল্পনা, জো কী করতে যাচ্ছেন!আমার উত্তর হলো- আমি লড়াইয়ে আছি এবং আবারও জয়ী হতে যাচ্ছি।’ এ সময় সমর্থকরা তার নাম ধরে চিৎকার করে উল্লাস করেন।
নির্বাচনি লড়াই চালিয়ে যেতে এটা বাইডেনের সর্বশেষ অঙ্গীকার এবং এর মাধ্যমে তিনি ক্রমশ জমাট বেধে ওঠা একটি রাজনৈতিক সংকটকে নিরসনের চেষ্টা করছেন।
১৭ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে করা বিতর্কের চেয়েও অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। আর এখানে তিনি অঙ্গীকারটি এমন সময় করলেন, যখন তিনি প্রচারণার ক্ষেত্রে একটি কঠিন সময় পার করছেন। কারণ এই সময়েই কিছু ডোনার ও ডেমোক্র্যাট সহযোগীরা বিবেচনা করছেন যে বাইডেনের লড়াইয়ে থাকা উচিত কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনে বাইডেনের পুনর্নির্বাচনি লড়াই দৃঢ় হবে নাকি ভেঙে যাবে- সে বিষয়ে তার প্রচার দল খুবই সচেতন।
রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের পর বাইডেন যে সমর্থন হারিয়েছেন, তা এখন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন তিনি।
ম্যাডিসনে তার বক্তব্যের পর এবিসি নিউজের সঙ্গে বাইডেনের একটি সাক্ষাতকার প্রচারের কথা রয়েছে, যেটি তার অঙ্গীকার ও ফিটনেস নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।
এদিন জো বাইডেন যখন সমাবেশের মঞ্চে উঠছিলেন, তখন তিনি একজন ভোটারের পাশ কাটিয়ে যান, যার হাতে থাকা প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘পাস দ্য টর্চ, জো’ অর্থাৎ ‘টর্চটা আরেকজনকে দাও, জো’। আরেকজনের হাতে ছিল- ‘নিজের সুনাম রক্ষা করো, বিদায় নাও’।
এ নিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমি এসব গল্প দেখছি যাতে বলা হচ্ছে- আমি খুবই বয়স্ক!’ এ সময় তিনি হোয়াইট হাউসে তার অর্জনের বর্ণনা দিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘দেড় কোটি চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য আমি কি খুব বয়স্ক ছিলাম? আমি কি ৫০ লাখ আমেরিকানের শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফের জন্য খুবই বয়স্ক ছিলাম?’
বাইডেন এ সময় জানতে চান- আপনারা কী মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে আমি খুবই বয়স্ক? জবাবে সমবেত জনতা ‘না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
এদিকে বাইডেনের আগ্রাসী প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছে তার প্রচার দল। তার স্ত্রী জিল বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ব্যাপক প্রচারণার পরিকল্পনা করছেন। যেসব রাজ্যের ভোটাররা বেশি দোলাচলে রয়েছেন অর্থাৎ যেগুলো ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত, সেসব এলাকায় চলতি মাসেই সফর করবেন তারা।
বাইডেন নিজে রোববার পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে যোগ দেবেন। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টকে তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যদিও কমলা হ্যারিসের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছে, যদি বাইডেন সরে দাঁড়ান।
বাইডেন স্বীকার করেন যে, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে গোলমাল পাকিয়েছেন। তিনি বিমান ভ্রমণজনিত ক্লান্তিকে তার দুর্বল পারফরমেন্সের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ব্যস্ত ভ্রমণ শিডিউলের জন্য বিতর্কের আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাইনি।
বাইডেন বলেন, ‘আমি আমার কর্মকর্তাদের কথা শুনিনি...এবং এরপর মঞ্চে আমি প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।’ এবিসির সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ফ্রাইডে ইভনিং ইন্টারভিউতেও তিনি ক্লান্তি ও ‘ঠান্ডা লাগা’র কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। খুব বাজে লাগছিল।’
এদিকে ম্যাসাচুসেটস গভর্নর মাউরা হিলে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেটাই সিদ্ধান্ত নিন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর জন্য সবকিছু করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ সূত্র: বিবিসি