যুদ্ধের দুর্ভোগের মধ্যেই নতুন সংকটে গাজাবাসী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:২৪ এএম
যুদ্ধের দুর্ভোগের মধ্যেই নতুন সংকটে গাজাবাসী
সারা গায়ে গুটি গুটি লাল ছোপ। চুলকানো ও ব্যথা। সারা রাত ঘুমাতে পারে না ওয়াফা এলওয়ানের ৫ বছর বয়সি ছোট্ট ছেলে। অবুঝ শিশুটির চিৎকারে গোমট হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। আশ্রয়কেন্দ্রে কাটানো দিনগুলো আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে ওয়াফার জন্য। কেননা, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় এবার নতুন আতঙ্ক শিশুদের চর্মরোগ। চোখের সামনে সন্তানের এই যন্ত্রণা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে এই তথ্য।
ইসরাইলের হামলা থেকে বাঁচতে বাস্তুচ্যুত ওয়াফা গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে একটি তাঁবুতে থাকেন। গায়ে চুলকানির কারণে তার ছেলে সারা রাত কান্না করে। ফলে ঘুমাতে পারে না পুরো পরিবার। শিশুটির পা-জুড়ে দেখা মিলল সাদা-লাল ফুসকুড়ি। গায়ে থাকা টি-শার্টের নিচে এমন ফুসকুড়ি আছে আরও বেশি। ওয়াফার ছেলের মতো গাজার আশ্রয়শিবিরে থাকা অনেকে নানান চর্মরোগে ভুগছে। ওয়াফার আশ্রয়কেন্দ্রটি নিকটবর্তী একটি সাগরের কাছে অবস্থিত। সেখানে হাজারো ফিলিস্তিনি রয়েছেন। ওয়াফা বলেন, ‘আমরা মাটিতে ঘুমাই, বালুতে ঘুমাই। নিচ থেকে পোকা-মাকড় উঠে আসে।’ তিনি মনে করেন, যে ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তাদের থাকতে হয়, তাতে সংক্রমণ অপরিহার্য। ওয়াফা আরও বলেন, ‘আমরা আগের মতো করে সন্তানদের গোসল করাতে পারি না। এখানে কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মতো কোনো স্যানিটারি পণ্যও আমাদের কাছে নেই। এখানে কিছুই নেই।’ প্রায়ই তাঁদের সন্তানদের ভূমধ্যসাগরে গোসল করতে বলা হয়ে থাকে। তবে সেখানেও মারাত্মক দূষণ। ময়লা-আবর্জনাসহ শিশুদের ন্যাপকিন পর্যন্ত ফেলা হচ্ছে সাগরে।
ডব্লিউএইচও’র হিসাব মতে, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৯৬ হাজার ৪১৭টি খোসপাঁচড়া (স্ক্যাবিস) ও পরজীবী সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। জলবসন্তে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ৯ হাজার ২৭৪টি। ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়ার ঘটনা ৬০ হাজার ১৩০টি। ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগের ঘটনা ১০ হাজার ৩৮টি। দেইর আল-বালাহ আশ্রয়শিবিরে অস্থায়ীভাবে একটি ক্লিনিক চালাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট সামি হামিদ। তিনি বলেন, গাজায় বিশেষ করে খোসপাঁচড়া ও জলবসন্তের বিস্তার ব্যাপক। চর্মরোগ চিকিৎসায় গাজায় ওষুধের ঘাটতি আছে। ৪৩ বছর বয়সি হামিদ আক্রান্ত শিশুদের ত্বকে ক্যালামাইন লোশন মাখিয়ে দিয়ে অস্বস্তি কমানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, গরম আবহাওয়া ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুদের ত্বকে সমস্যা হচ্ছে। গাজায় ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) চিকিৎসাবিষয়ক সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, শিশুদের ঝুঁকি বেশি। কারণ, তারা শিশু। তারা বাইরে খেলাধুলা করে। বিভিন্ন জিনিস স্পর্শ করে। কোনো কিছু না ধুয়ে খেয়ে ফেলে। মুগাইসিবের মতে, গরমে ঘাম বেশি হচ্ছে। শরীরে ময়লা জমছে। এতে ফুসকুড়ি ও অ্যালার্জি হচ্ছে। এগুলো চুলকাতে চুলকাতে সংক্রমণ হয়ে যায়। এমএসএফের চিকিৎসকদের আশঙ্কা, গাজার আশ্রয়শিবিরে লেশম্যানিয়াসিসের মতো অন্য চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে। মুগাইসিব বলেন, গাজার শিশুরা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে আছে। কারণ, অপুষ্টিতে তাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুযায়ী, গাজায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশুর তীব্র অপুষ্টির জন্য অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।