Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারতের বিচারব্যবস্থায় শঙ্কা, বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বদলে গেল ব্রিটিশ আইন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০১:২৪ এএম

ভারতের বিচারব্যবস্থায় শঙ্কা, বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বদলে গেল ব্রিটিশ আইন

ভারতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি সংগৃহীত

বিতর্কের মধ্যেই নতুন তিনটি ফৌজদারি আইন কার্যকর করেছে ভারত। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সোমবার থেকেই আইনগুলো কার্যকর করেছে দেশটি। যার জেরে বদলে গেল দীর্ঘ সময় ধরে মেনে চলা ব্রিটিশ আইন। ভরতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি, ব্রিটিশ আইনে এতদিন সাজার কথা বলা হয়েছিল। এবার নতুন আইনে সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পান সেই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে। 

তবে বিরোধীরা বলছেন ভিন্ন কথা। প্রকাশ করেছেন শঙ্কাও। তারা মনে করছেন, পুলিশ ও শাসকগোষ্ঠীর হাতে এ আইন আরও লাগামহীন ক্ষমতা তুলে দেবে। ভবিষ্যতে এসবের অপব্যবহার হবে। যা বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। বলছেন, নতুন এ আইনের জেরে বিচারব্যবস্থায় বেশ জটিলতা দেখা দিতে পারে। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ইকোনমিক টাইমস, বিবিসি।  

নতুন যে তিনটি আইন চালু হয়েছে সেগুলো হলো ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের (ভারতীয় দণ্ডবিধি) পরিবর্তে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অ্যাক্টের (ফৌজদারি বিধি) পরিবর্তে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টের (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) বদলে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’। এই তিনটি নতুন ফৌজদারি আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এর ফলে ভারতে ফৌজদারি বিচার আগের চেয়ে অনেকটাই দ্রুত হবে। মোদি সরকারের দাবি, নতুন আইনে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা, নারী ও শিশু সুরক্ষা, ন্যায়বিচার পাওয়া, সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। বাদ পড়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান। এছাড়া ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আর ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে। পরিবেশ দূষণ ও মানব পাচারের মতো অপরাধকে ন্যায় সংহিতায় সাজার আওতায় আনা হয়েছে। 

এছাড়া সাইবার অপরাধ এবং আর্থিক প্রতারণার মতো নতুন অপরাধও যুক্ত হয়েছে ন্যায় সংহিতায়। নতুন আইনে নারী সুরক্ষা এবং নারীদের সঙ্গে ঘটা বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিধি আরও কঠোর করা হয়েছে।

১৮ বছরের কমবয়সি বা নাবালিকা ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা আজীবন কারাদণ্ড এবং গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ডের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। নতুন আইন চালু হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ১৮৬০। বাতিল হয়েছে ফোরটোয়েন্টি বা চারশ বিশ (৪২০) ধারা। দেড়শ বছরেরও বেশি প্রাচীন ব্রিটিশ জমানার ভারতীয় দণ্ডবিধির দিন শেষ দেশটিতে।

এদিকে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসসহ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, নতুন আইন খুব দ্রুত চালু করা হয়েছে। এই আইনগুলো নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়েও আলোচনা করা দরকার ছিল বলেও জানিয়েছেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছেন। তার বক্তব্য, ‘এই আইনগুলো নিয়ে আরও বেশি পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল।’ 

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক ছাড়াই তিনটি নতুন বিল আনা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী কলিন গোঞ্জালভেস বিবিসিকে বলেছেন, শুনে হতবাক হয়েছিলাম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলেছিলেন ঔপনিবেশিক দমন মূলক আইনকে বদলে ফেলতে এই নতুন আইন বলবৎ করা হচ্ছে। 

কারণ এই আইন ব্রিটিশ আইনের চেয়ে দশগুণ খারাপ। মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী এবং এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেছেন, এই আইন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করবে। পুলিশের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। 

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, ‘সরকারের সমালোচকদের’ থামাতে ‘অপব্যবহার’ হতে পারে নতুন আইনের। 

এদিকে নতুন এই আইনের অধীনে দিলি­তে ইতোমধ্যে একটি মামলাও নথিভুক্ত হয়েছে। দিলি­র কমলা মার্কেট থানায় এ মামলা নথিভুক্ত হয়। একজন হকারের বিরুদ্ধে রাস্তা আটকে ব্যবসা করার অভিযোগে এ মামলা হয়।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম