পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর পরবর্তী মহাসচিব হচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে। ন্যাটোর নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিস নিজের নাম প্রত্যাহার করায় জোটের পরবর্তী মহাসচিবের পদ নিশ্চিত হচ্ছে মার্ক রুটের।
রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিসের কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, ক্লাউস ইওহানিস গত সপ্তাহের শেষে সামরিক জোটকে জানিয়েছেন তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
রোমানিয়ার সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা কাউন্সিল ডাচ প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দেওয়ায় ন্যাটোর পরবর্তী প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পথ সহজ হয় মার্ক রুটের জন্য।
দুজনই ন্যাটোর বর্তমান মহাসচিব ইয়ানেস স্টলটেনবার্গের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। স্টলটেনবার্গের মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে। মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে মার্ক রুটে বর্তমানে একমাত্র প্রার্থী। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সমর্থন জানায়নি।
৫৭ বছর বয়সি মার্ক রুত্তে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার তত্ত্বাবধানের উত্তরাধিকারী হবেন।
গত গ্রীষ্মে জোট সরকারের পতনের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন রুটে। পরে অবসরের ঘোষণার কথা বলে ন্যাটোর শীর্ষ পদে বসার ইঙ্গিত দেন তিনি।
আগামী জুলাইয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
১৩ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুটে। নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী।
জোটে অভিযোগ উঠেছিল, মার্ক রুট অভিবাসীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন। এর ফলে চারদলীয় জোট ভেঙে যায়। এরপর নির্বাচনে দক্ষিণপন্থিরা সবচেয়ে বেশি আসন পায়। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় হারের মুখে পড়েন। এরপর থেকে তিনি কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। কারণ দক্ষিণপন্থি দল এখনো সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে রুটে তার অবসর ঘোষণার কথা ভুলে ন্যাটোর শীর্ষ পদে বসার ইঙ্গিত দিতে থাকেন। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে দেখা করতে শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার সূত্রে তাদের আগে থেকেই চিনতেন ও জানেন মার্ক রুট।
মার্ক রুটে হলেন ইউক্রেনের একনিষ্ঠ সমর্থক। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতেও তার অসুবিধা হয়নি। পরে ন্যাটোর অন্য সদস্য দেশও তাকে সমর্থন জানায়।
তবে হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সমর্থন পেতে তার কিছুটা দেরি হয়। অরবানের সঙ্গে রুটের সম্পর্ক আগে খুব একটা মধুর ছিল না। রুটেকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে, তিনি যতদিন ন্যাটোর নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন হাঙ্গেরি ন্যাটোর সীমার বাইরে ইউক্রেনকে সহায়তা করবে না। অরবানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক খুব ভালো এবং তিনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন।
১৯৪৯ সালের ৪ জুলাই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এর সদস্য ৩২টি। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের মধ্যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। প্রথমে সদস্যপদ পেয়েছে ফিনল্যান্ড। সবশেষ তুরস্কের দীর্ঘ আপত্তি শেষে সুইডেন চলতি বছর ৮ মার্চ ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ করে।
সূত্র: বিবিসি।