ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে অর্থায়ন, বিচারের মুখে রুশ-মার্কিন নারী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
রুশ-মার্কিন নারী কেসনিয়া ক্যারেলিনা। ছবি- লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস
চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ায় এসে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সময় গ্রেফতার হন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নারী কেসনিয়া ক্যারেলিনা।
রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে পাঠানোর জন্য অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ এনেছে।
বৃহস্পতিবার ওই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। দোষী প্রমাণিত হলে তাকে ১২ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে৷
রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া কেসনিয়া ক্যারেলিনা, এক দশকেরও বেশি আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি স্পা সেন্টারে একজন সৌন্দর্যবিদ হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন।
রাশিয়ায় তার বিচার প্রক্রিয়াটা অবরুদ্ধ কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মামলার ক্ষেত্রে যেমনটা রাশিয়ায় প্রচলিত। এ ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন ও খালাস- উভয়ই সেখানে বিরল।
এদিন ইয়েকাটেরিনবার্গের ইউরালস শহরের আদালত একটি কাঁচঘেরা খাঁচায় বসে থাকা জিন্স এবং একটি সবুজ প্লেড শার্ট পরিহিত ক্যারেলিনার একটি শর্ট ভিডিও প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকরা ছবি তোলার সময় মৃদু হাসতেও দেখা যায় তাকে।
বর্তমানে রাশিয়ান কারাগারে কমপক্ষে এক ডজন আমেরিকান বন্দি রয়েছে। যাদের মধ্যে ক্যারেলিনা ও একজন। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের সংকটে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের একটি ক্রমবর্ধমান তালিকার অংশ হিসেবে নিজেকে খুঁজে পান তিনি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যারেলিনা যখন তার বাবা-মা এবং ছোট বোনের সঙ্গে দেখা করতে ইয়েকাটেরিনবার্গে যাচ্ছিলেন, ওই সময়ই তাকে আটক করে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)।
এ বিষয়ে তার সাবেক শাশুড়ি এলিওনোরা স্রেব্রোস্কি ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্সকে বলেছিলেন, ক্যারেলিনা র প্রেমিক বিমানের টিকিট দিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দিলে, তিনি নতুন বছরের শুরুতেই নিজ পরিবারের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
স্রেব্রোস্কির জানান, ওইসময় তিনি তার প্রেমিককে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রাশিয়া তার জন্য ‘নিরাপদ’ এবং সেখানে তার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
তবে রাশিয়ায় পা রাখতেই তাকে আটক করা হয় এবং প্রথমে তাকে একটি ছোটখাটো অপরাধের ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয় এবং পরে ক্যারেলিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।
স্রেব্রোস্কি জানান, ক্যারেলিনা ইউক্রেনের জন্য রাজম নামক একটি সংস্থাকে স্বল্প পরিমাণে অনুদান দিয়েছিলেন। রাজম হলো নিউইয়র্কভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা, যেটি মূলত রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে বেসামরিকভাবে সহায়তা পাঠাতো।
৩০ বছর বয়সি ক্যারেলিনা ২০১২ সালে একটি ওয়ার্ক-স্টাডি প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে স্বল্প পরিসরে এলিওনোরা স্রেব্রোস্কির ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ক্যারেলিনার এই সাবেক স্বামী তাকে একজন হাসিখুশি ও আনন্দে মজে থাকা নারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি রাজনীতিকে খুব একটা পাত্তা দেন না।
ক্যারেলিনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলো ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি একাকি বা বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্র সৈকত ও বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেই পছন্দ করেন। তবে সেগুলোর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ২০২১ সালের নভেম্বরের একটি ছবিতে তাকে একটি লম্বা পোশাকে দেখা যায়। সেখানে তাকে একটি ছোট মার্কিন পতাকা হাতে হাস্যোজ্জল অবস্থায় দেখা যায়। যার ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘নাগরিকত্ব’। অর্থাৎ তিনি ওই সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন। সূত্র: এনডিটিভি।